জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ফের ব্যাটারিচালিত রিকশা চালুর দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিলে চরম ভোগান্তিতে পড়ে ৫৪তম ব্যাচে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও কমনওয়েলথের এশিয়া সুশাসন ও শান্তি বিষয়ক প্রধান মিশেল স্কোবি এবং কয়েকজন সাংবাদিকও ভিতরে আটকে পড়েন বলে জানা যায়।
আজ বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ভর্তি হতে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের শেষ সময় নির্ধারিত থাকায় অনেকের ভর্তি কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
বুধবার (২৫ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের মূল গেটে তালা দিয়ে অবরোধ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের একদফা দাবি— ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিকশা পুনরায় চালুর অনুমতি দিতে হবে।
অবরোধকালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদেরও ভিতরে প্রবেশ ও প্রস্থানে বাধা দেওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।
ঢাকার টঙ্গী থেকে আসা এক অভিভাবক বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে ভর্তি করাতে এসেছিলাম। ভর্তি শেষ হয়েছে তবে আমার ছেলে ভবনের ভিতরে রয়েছে। তাকে বের হতে দিচ্ছে না। আমার ছেলে সহ অনেকে ভিতরে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেকটা জিম্মি করে আন্দোলন করছে। অনেকে ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। এভাবে আমরা অনেক ভোগান্তি পোহাচ্ছি।’
রাজশাহী থেকে আসা এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মেয়েকে ভর্তি করাতে এসেছি। সকালে এসে দেখি ভবনের দরজা বন্ধ। আন্দোলনের কারণে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারছি না। আজ ভর্তির শেষ দিন, এই অবস্থায় আমরা খুব চিন্তায় পড়ে গেছি।’
ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আজ বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে ভর্তি শেষ করতে হবে। কিন্তু আমরা প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে ঢুকতেই পারছি না। এতে আমাদের ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম ভিতরে আটকে পড়াদের বের করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে কমনওয়েলথের অতিথি ও সাংবাদিকদের বের করে দেওয়ার অনুরোধ জানালে বিক্ষোভকারীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং মারতে তেড়ে আসেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৫১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজির রহমান হিমেল। এছাড়াও ইতিহাস ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ইতিহাস ছাত্র সংসদের জিএস এ কে এম রোকোনুজ্জামান রিমন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাইম আহমেদ সানিসহ কয়েকজন উগ্র আচরণ করেন। বাকিদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। আন্দোলনকারী নন এমন শিক্ষার্থীরাও তাদেরকে প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করলে তাদের ওপরেও চড়াও হন বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন। এর একটুপর তারা কিছুক্ষণের জন্য তালা খুলে দেন।
অবস্থানরত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আরিয়ান কবির বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক দাবির বিষয়ে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। উপাচার্য স্যার যদি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে সত্যিই চিন্তিত হতেন, তাহলে এতক্ষণে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। তার উপস্থিতি ও সদিচ্ছাই এই সংকট সমাধানে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তিনি আসছেন না। আজ ভর্তি কার্যক্রম অনিশ্চিত হওয়ার সম্পূর্ণ দায়ভার প্রশাসনের।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, তারা ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছিলো। তাদেরকে বলা হয়েছে লিখিত আবেদন দিতে সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে অংশীজনদের মতামত নিয়ে সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থী অতি উৎসাহী হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছে। সেগুলোর ফুটেজ সংগ্রহ করে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর অটোরিকশার ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ তম আবর্তনের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা কারিস রাচির মৃত্যুতে পরবর্তীতে সম্পূর্ণভাবে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোহাগ/মিরর