জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গত ২ মে পূর্ব ঘোষিত আসন্ন আগামী ৩১ শে জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলেও বহিরাগত প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মুলা ঝুলিয়ে রাখার মতো! এটি কার্যকরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অপারগতা যেন প্রতি শুক্র ও শনিবারের নিত্যকার দৃশ্য।

সাধারণত প্রতি শুক্র ও শনিবারে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অনেক বহিরাগতদের আনাগোনা হয়। দেখে বুঝার উপায় থাকে না এটি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নাকি কোনো পর্যটন কেন্দ্র!

আজ শুক্রবার (২০ জুন) বাদ জুম’আ ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকগুলোতে পরিদর্শনে গেলে লক্ষ্য করা যায় পায়ে হেটে হেটে  প্রবেশ করছে বহিরাগতরা। কেউবা আসছে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে, কেউবা আসছে সপরিবারে ঘুরতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে স্কেটিং করতে থাকা এক ছেলেকে ক্যাম্পাসের কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, না আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। আমি ও আমার চার বন্ধুরা মিলে স্কেটিং করে মিরপুর থেকে এখানে এসেছি। এখানে প্রবেশের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ৩ টি গেইটে আমাদের প্রবেশে বাধা দিয়েছিল, পরে গুগল ম্যাপ দেখে চার নাম্বার গেট দিয়ে প্রবেশ করি। আমরা এখানে আসছি এখানকার পরিবেশ সুন্দর, দেখতে আসছি, এখানে বটতলায় ভর্তা ভাত খেতে ভালো তাই আসছি।

ক্যাম্পাসে তার পরিচিত কোনো শিক্ষার্থী বন্ধু, কর্মকর্তা কর্মচারী আছে কি না জিজ্ঞাসা করলে  তিনি বলেন, না এখানে কেউ নেই। আমরা নিজেরাই বন্ধুরা মিলে এসেছিলাম।

অন্য আরেকজন ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও জানান তিনি জিরাবো থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন। ক্যাম্পাসে কোনো পরিচিত বন্ধু বা কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে এসেছেন কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনিও জানান, না আমরা কারোর কাছে আসিনি। আমরা এখানে বটতলায় ভর্তা ভাত খেতে এসেছিলাম, ক্যাম্পাস ঘুরতে এসেছিলাম।

বহিরাগতরা কিভাবে প্রবেশ করতে পারছে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত আনসার সদস্য মো. তোতা মিয়া বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা প্রবেশ করছে তবে এদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা, কর্মচারী অথবা শিক্ষার্থীদের গেস্ট পরিচয়ে প্রবেশ করছে। আমরা প্রধান ফটকে এমন কাউকে প্রবেশ করাচ্ছি না যারা এই আওতার বাইরে। আমরা সাধারণ বহিরাগতদের কোনোভাবে প্রবেশ করাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, যে সকল বহিরাগতরা আসছে আমরা প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করছি এবং কেউ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছে আসলে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা আমাকের কল করে নিজেদের পরিচয় দিলে আমরা তাদের প্রবেশ করতে দিতে বাধ্য হচ্ছি।

যদিও আমাদের উপর নির্দেশনা আছে কোনো শিক্ষার্থীর গেস্ট আসলে সেই শিক্ষার্থী এসে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের এরকম কথা বললে তারা আমাদের সাথে বাগবিতণ্ডা শুরু করেন এবং আমরা এক প্রকারে বাধ্য হয়েই শুধু পরিচয় নিয়েই প্রবেশ করতে দেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ প্রজ্ঞাপন জারি থাকা সত্ত্বেও এতো পরিমাণে বহিরাগত কিভাবে প্রবেশ করছে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান জেফরুল হাসান সজল বলেন, আমরা আসলে বহিরাগতদের প্রবেশে যথাযথ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমাদের আনসার সদস্য কিছু কম থাকায় আমরা শতভাগ প্রবেশ নিষেধ করতে না পারলেও কাছাকাছি যাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, গত কয়েকদিনে বহিরাগতদের প্রবেশ সংখ্যা কম ছিল। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী রাঙামাটি মাঠে একটি ফুটবল খেলার আয়োজন করে যেখানে অসংখ্য মানুষ আসে। ওইদিক থেকেও অনেকে প্রবেশ করেছিল আজকে।

তবে আগামী দিনগুলোতে আমরা আরও সোচ্চার হয়ে প্রশাসন এর সহায়তায় ও প্রশাসনের পরিকল্পনামাফিক নির্দেশক্রমে কাজ করবো।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ. কে. এম রাশিদুল আলম বলেন, বহিরাগতদের প্রবেশ শূন্যের কোঠায় আনতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আসন্ন জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে এটি নি:সন্দেহে একটি উদ্বেগের বিষয় এবং আমরা এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছি। এ ব্যাপারে আমাদের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

উল্লেখ্য, আগামী ৩১ জুলাই ২০২৫, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন উপলক্ষে গত ২ মে ২০২৫ (শুক্রবার) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল।

সোহাগ/মিরর