1. admin@dailymirrorofbangladesh.com : mirror :
  2. mamun.cou16@gmail.com : Mamun : Mamun
  3. m.sohag21st@gmail.com : Sohag Shah : Sohag Shah
  4. shiblyhasan1212@gmail.com : shibly hasan : shibly hasan
  5. mohiuddinahmadtanveer@gmail.com : Mohiuddin Ahmad Tanveer : Mohiuddin Ahmad Tanveer
৩৫ কোটি টাকার সেতুতে শত কোটি টাকা আদায় হলেও টোলের নামে ভোগান্তি! » দ্যা মিরর অব বাংলাদেশ
২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| গ্রীষ্মকাল| শুক্রবার| রাত ৪:৩১|

৩৫ কোটি টাকার সেতুতে শত কোটি টাকা আদায় হলেও টোলের নামে ভোগান্তি!

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫
  • ৭ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে
495075213 545000192015825 1236838558062033304 n e1747931918217

কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালী গড়াই নদীর উপর নির্মিত প্রথম সড়ক সেতু সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতু থেকে গত ১৮ বছর ধরেই চলেছে টোল আদায়। এই সময়ে টোল আদায় হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। অথচ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু থেকে টোল আদায় বন্দ হচ্ছিলো না।

 

ভোগান্তির শেষ ছিলোনা জনসাধারনের। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত বছরের ৭ আগস্ট সকালে টোল আদায় বন্ধের দাবিতে টোলপ্লাজায় আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। সে সময় টোলপ্লাজা ছেড়ে পালিয়ে যান আদায়কারী। ১৩ আগস্ট সওজ কর্তৃপক্ষ টোল আদায় করতে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাধা দেয়।

 

এরপরও কয়েক দফা হামলা হয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে সেখান থেকে চলে আসেন কর্মকর্তারা। এরপর থেকে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। এদিকে একটি মহল আবার টেন্ডার দিয়ে টোল আদায়ের চেষ্টা করছেন, ফলে পুনরায় ফুঁসে উঠছে সর্বস্তরের জনগন। করছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন।

 

ইতিমধ্যেই সড়ক ও জনপদ বিভাগ কয়েকবার ইজারার জন্য টেন্ডার আহব্বান  করায় নতুন করে শুরু হয়েছে উত্তেজনা। সৃষ্টি হয়েছে জনমনে চরম অসন্তোষ। প্রথমে ১৬ কোটি টাকা বাজেটে কাজ শুরু হলেও পরবর্তিতে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়।

 

কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কুমারখালীর গড়াই নদীর উপর সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতুটি ১৯৯৮ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০৫ সালের ১লা ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াা সেতুর উদ্বোধন করেন। ২০০৫ সাল থেকে এই সেতু ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করে আসছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

 

নির্মাণ ব্যয়ের কয়েক গুণ টাকা ইতিমধ্যে আদায় হলেও চলছিলো টোল আদায়। এই সেতুর টোল আদায়কে কেন্দ্র করে মাঝে-মধ্যেই ইজারারদের লোকজনের সাথে জনসাধারনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। মাত্র ৫শ মিটারের এই সেতুতে দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতে প্রতিদিন গুনতে হয় ২০ থেকে ১শ টাকা পর্যন্ত। ফলে ভোগান্তি নিরসনের কাঙ্খিত সেতুই এখন জনসাধারনের ভোগান্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম সৈয়দ মাছ-উদ রুমীর নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে। তবে শুরু থেকেই সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন নামকরণের দাবীও ছিল। স্থানীয় ভাবে সেতুটি কয়া ব্রীজ নামেও পরিচিত। এই সেতুতে টোল আদায়কে কেন্দ্র করে প্রায়ই ইজারাদারের লোকজনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো। প্রথম দিকে পায়ে চালিত যানবাহন থেকে টোল আদায় বন্ধ ছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ইজারাদার ও সওজ‘ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভ্যান, রিকশা ও সাইকেল থেকেও ১০ টাকা করে টোল আদায় হচ্ছিলো।

 

এতে দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। টোল বন্ধের জন্য  বহুবার আন্দোলন হয়েছে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আহত জুলাই যোদ্ধা কুমারখালীর আয়োজনে বাসস্ট্যান্ডে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় গত ২১ মে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমারখালী শাখার আহবায়ক আব্দুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কুমারখালী উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও জামায়াতের কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি নমিনি আফজাল হুসাইন, কুষ্টিয়া শহর ছাত্র শিবিররে সভাপতি হাফেজ সেলিম রেজা, কুমারখালী প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সোহাগ মাহমুদ খান, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক শরিফুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার মুখপাত্র পারভেজ মোশাররফ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা মুশফিকুর রহমান তিহা, নয়ন হোসেন প্রমূখ।

 

সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্র জানায়, ইজারা থেকে সেতুতে সাম্প্রতিক ৬ বছরে ইজারার মাধ্যমে আয় হয়েছে- ২০১৬-২০১৭ সালে ৫ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২০১৯-২০২১ সালে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, ২০২১-২০২৪ অর্থ বছরে ২৫ কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। অত্র সেতুতে সর্বমোট আয় হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। ভুক্তভোগীরা বলেন, বাইসাইকেল থেকে টাকা নেওয়া একদমই যুক্তিহীন। এদের বেশিরভাগ লোকই দিনমজুর।

 

অনেক চালক বলেন, কয়েকবার সেতু পার হওয়ার জন্য তাদের টোল দিতেই বেশিরভাগ টাকা চলে যেত। সেতুর টোল বন্দের এই দাবীকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন সচেতন নাগরিকরা।

 

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেম বলেন, সড়ক সেতু জনগনের জন্যই, তাদের স্বার্থে আমরা সেতুর টোলের ব্যাপারেও একমত পোষন করছি।

 

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ নেই, সুতরাং টোল বন্দ করা সহজ। অন্যদিকে যেহেতু ব্যয়কৃত অর্থ উঠে গেছে, সেহেতু টোল ফ্রি করা যৌক্তিক।

 

কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লুৎফর রহমান বলেন, টোল আদায় বন্দ হওয়াই উচিত। নির্মাণ ব্যয় উঠে গেছে, জনসাধারনের স্বার্থে সব ধরনের টোল বন্ধ অবশ্যক। আওয়ামী লুটেরাদের টাকা আদায়ের এই ফাঁদ আবার চালু হোক এটা কাম্য নয়। তিনি নতুন করে টেন্ডার আহব্বানের  নিন্দা জানান। 

 

কুষ্টিয়া জজ কোর্টের কনিষ্ঠ এপিপি অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম বলেন, অযৌক্তিক করের বোঝা যদি জনগণকে ভোগান্তির সম্মুখীন করে তবে সেটা রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। ছোট ছোট যানগুলোর জন্য টাকা তুলে জনগণের ভোগান্তি কাম্য না। টোল আদায় বন্দ করতে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।

 

কুমারখালী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ী কে এম আলম টমে বলেন, টোল বন্দ করা সবার দাবী। আমি বন্দের পক্ষে ছিলাম এবং আছি। নতুন করে টোল আদায়ের চেষ্টা জনগন মেনে নেবেনা। টোল আদায় বন্ধ আছে, বন্দই থাকবে। টাকা উঠে গেছে, এখন আবার কীসের টোল!

 

কুমারখালী টার্মিনালে অপেক্ষমান অটো চালক আকবার হোসেন ও বাস চালক আব্দুল খালেক বলেন, এটা ছিল জুলুম। এই জুলুম আবার চালু হোক এটা আমরা চায় না।

 

মোটরসাইকেল চালক আবু সাইদ ও ভ্যান চালক রায়হান শেখও টোল ফ্রি করার দাবী করেন। তারা টোল ফ্রি করার দাবীতে যারা আন্দোলন করছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।

 

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, টোল আদায় কবে বন্ধ হবে তা নির্ভর করছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপর। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে বন্ধ করা হবে টোল আদায়।

 

কুষ্টিযা রাজবাড়ীসহ এই অঞ্চলের সর্ব স্তরের জনসাধারনের একটাই প্রত্যাশা, এই মরহুম সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতুতে আর কোনদিন টোল আদায় হবেনা, ভোগান্তি নিরসন হবে সবার, টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্দই থাকবে। চিরদিনের জন্যসেতুতে টোল আদায় বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন পরিবহনের মালিক ও চালকবৃন্দ। 

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © THE MIRROR OF BANGLADESH 2024