জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে সেবার নামে চলছে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য। ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে ঘুষ দিতে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে বগারচর ইউনিয়ন ভূমি অফিস।
ভিডিওটি প্রকাশের পরপরই বগারচর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) সাজ্জাত হোসেনকে বদলি করে দেওয়ানগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কিছুটা স্বস্তি দিলেও জনগণ চাইছেন স্থায়ী সমাধান।
সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় সারাদেশে ভূমি সেবাকে সহজীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের আওতায় এনেছে। কিন্তু বাস্তবে বকশীগঞ্জে এই ডিজিটাল পদ্ধতি হয়ে উঠেছে ভোগান্তির নতুন নাম।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে সাতটি ভূমি অফিস রয়েছে, যেগুলো ২৫টি মৌজার সেবা প্রদান করে। সেবাগ্রহীতারা জানান, এসব অফিসে নামজারি, খতিয়ান সংশোধন, জমা খারিজ কিংবা দাখিলার মতো সাধারণ সেবার জন্য দিতে হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। ঘুষ না দিলে ফাইল দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়, খোঁজ নিতে গেলে বের করা হয় নানা অজুহাত।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বগারচর ইউনিয়নের এক বাসিন্দা অভিযোগ করছেন, নামজারির জন্য নায়েব সাজ্জাত হোসেন তার কাছ থেকে দুই ধাপে ১২ হাজার টাকা নিয়েছেন। অথচ নির্ধারিত সরকারি ফি মাত্র কয়েকশ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
ভিডিওটি প্রকাশের পর তড়িৎ ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সাজ্জাত হোসেনকে বকশীগঞ্জ থেকে বদলি করে দেওয়ানগঞ্জে পদায়ন করা হয়। বদলির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর একে একে মুখ খুলতে শুরু করেন আরও অনেক ভুক্তভোগী।
বগারচরের ঘাসিরপাড়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, “জমির নামজারির জন্য ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি। কিন্তু পরে আমাকে শুধু ১,৪৬০ টাকার দাখিলা ধরিয়ে দেন। নামজারির কোনো কাজ হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে তিনি শুনতেই চাননি।”
এক নারী ভুক্তভোগী জানান, “আমার নামজারির কাজের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আজ শুনলাম তিনি বদলি হয়েছেন। এত টাকা দিয়েও কাজ হলো না।”
শুধু বগারচর নয়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নেই একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেবাগ্রহীতারা জানান, নির্ধারিত ফি’র বাইরে টাকা না দিলে কাজ হয় না। বরং ভুল ধরিয়ে ভয় দেখানো হয়, এমনকি কখনো কখনো জমি অন্যের নামে নামজারি করে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, এ বিষয়ে কেউ মুখ খুললে তাদের ভয় দেখানো হয় বা হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেকেই জমি হারানোর ভয়ে চুপ থাকেন। ফলে দুর্নীতি দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, শুধু বদলি নয়; দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না। জনগণের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে এবং স্বচ্ছ সেবা দিতে কঠোর নজরদারি ও মনিটরিং দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাজ্জাত হোসেন ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বকশীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা উল হুসনা বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”