একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর, বিশেষত ঢাকায়, টেম্পু ছিল একটি জনপ্রিয় গণপরিবহন। যাত্রী পরিবহনের জন্য খরচ কম এবং সহজলভ্য এ বাহনটি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে ছিল ভীষণ প্রিয়। কিন্তু কালের বিবর্তন আর আধুনিক যাতায়াত ও নগর ব্যবস্থার প্রসারে এখন টেম্পু শুধুই স্মৃতির অংশ হয়ে গেছে।
টেম্পু কী ছিল? টেম্পু ছিল মূলত তিন চাকার একটি যান, যা ডিজেল বা পেট্রোলে চলত। এর গঠন ছিল খোলামেলা এবং একসঙ্গে ৮-১০ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারত। চালকের পেছনে দুই ধারে বসার জায়গা থাকত। বিশেষ করে ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে এটি ঢাকার রাস্তায় সবচেয়ে বেশি দেখা যেত।
টেম্পুর জনপ্রিয়তার কারণ:- ১. সাশ্রয়ী ভাড়া: অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় ভাড়া অনেক কম ছিল। ২. সহজলভ্য: শহরের প্রতিটি অলিগলিতে সহজেই পাওয়া যেত। ৩. স্থানীয় রুটে যাতায়াত: কম দূরত্বে চলাচলের জন্য এটি ছিল আদর্শ।
টেম্পু হারিয়ে যাওয়ার কারণ :-
সিএনজি ও রিকশার আগমন: সিএনজি চালিত অটোরিকশার জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় টেম্পুর জায়গা দখল করে নেয়।
পরিবেশ দূষণ: টেম্পুর ইঞ্জিন থেকে কালো ধোঁয়া বের হতো, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা: ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে সরকারের নির্দেশে ঢাকায় টেম্পু চলাচল বন্ধ করা হয়।
আধুনিক নগর পরিবহন: বাস সার্ভিস এবং অন্যান্য যানবাহনের উন্নতির ফলে টেম্পুর প্রয়োজনীয়তা কমে যায়।
টেম্পুর স্মৃতি : যারা ১৯৮০ বা ১৯৯০-এর দশকে বড় হয়েছেন, তারা এখনও টেম্পুর প্রতি এক ধরনের নস্টালজিক অনুভূতি পোষণ করেন। সেগুলো ছিল মানুষের জীবনযাত্রার অংশ। রাজধানী ঢাকার মিরপুর, যাত্রাবাড়ি, সদরঘাট—এসব এলাকায় টেম্পু ছিল এক সময় অপরিহার্য।
টেম্পুর ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব কি?
বর্তমান সময়ে টেম্পু হয়তো আর ব্যবহারিকভাবে ফিরে আসবে না, তবে এটি আমাদের গণপরিবহনের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মিউজিয়াম বা ঐতিহাসিক স্থানে একটি টেম্পু সংরক্ষণ করলে নতুন প্রজন্ম এ বাহনটির ঐতিহ্যের কথা জানতে পারবে।