কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫- এর গ ধারা অনুযায়ী বিবাহিত কোন ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে জায়গা পাবে না। এমন সু স্পষ্ট ধারা উল্লেখ থাকার পরও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত হওয়া পরও তাদের কমিটিতে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই কমিটিকে কেন্দ্র করে এখন জেলাজুড়ে চলছে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা।
বৃহস্পতিবার (২৮ শে জুলাই) রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ সাক্ষরিত জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এ কমিটিতে আসলাম উদ্দিনকে সভাপতি ও আশিকুর রহমান শুভকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে সভাপতি ও সম্পাদকের বিয়ের কাবিনের ছবি এর পর থেকেই জেলা জুড়ে ও রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে।
এর আগেও তাদের এই বিয়ের খবর কুষ্টিয়ার স্থানীয় একাধিক সংবাদপত্রে বেশ কয়েকবার প্রকাশিত হয়েছে। অপরদিকে সভাপতি আসলাম উদ্দিনের শ্বশুরের সাথে আসলাম উদ্দিনের একটি ফোনালাপ কমিটি হবার অনেক আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এছাড়াও নতুন কমিটির সভাপতি আসলাম উদ্দিন মিরপুর উপজেলার প্রভাবশালী এক নেতার গানম্যান (দেহরক্ষী) হিসেবে পরিচিত।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নব গঠিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই বিবাহিত। তাদের দুজনের স্ত্রীর নামও ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। সভাপতি আসলাম উদ্দিনের স্ত্রীর নাম সাদিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান শুভর স্ত্রীর নাম মাহফুজা আক্তার।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোন বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগের দলীয় কোনো পদ পদবীতে থাকতে পারবেন না। তাহলে মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কিভাবে বিবাহিতরা এলো এনিয়ে বেশ গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কমিটি হবার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পদ পাওয়া অনেক নেতাও যোগ্য পদ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, এমনকি টাকা লেনদেনের মতো কথাও উল্লেখ করেছেন। যেখানে তারা বলেছেন টাকা থাকলে সব হয়।
ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির অনেক নেতাই গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কমিটি হওয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যা ছাত্র রাজনীতির ধ্বংসের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তারা।
এছাড়াও কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতেও পাঁচজনের অধিক নেতা বিবাহিত রয়েছেন।
এছাড়াও চলতি বছরের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ। ঘোষিত কমিটিতে কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জীবন হাসান সোহেলকে সভাপতি ও নতুন মুখ রাশেদ আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি প্রকাশ করা হয়। সে সময় কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলমের বিরুদ্ধে বয়স জালিয়াতির অভিযোগ উঠে।
রাশেদ আলমের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ঘেটে দেখা যায় সেখানে তার জন্মতারিখ ১৬ অক্টোম্বর ১৯৯১ সাল ( জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর- ৮২৩৫০৬৯২৩৭ )। সেই হিসাবে তার বয়স ৩০ বছর ৪ মাস ৮ দিন। যদিও ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের সদস্য হতে হলে সর্বোচ্চ ২৯ বছর হতে হবে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৩০ বছর ৪ মাস ৮ দিন বয়স হওয়ার পরও স্থান পান রাশেদ আলম। তবে পরে যানা যায় জন্মনিবন্ধনে বয়স কমিয়ে ছাত্রলীগ কমিটিতে জায়গা পায় এই সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলম। ওই কিমিটিরও কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ অনুমোদন দেন। ওই কমিটিতে স্থান পায় অছাত্ররা।
এদিকে উপজেলায় ছাত্রলীগের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত থেকে মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেও প্রত্যাশানুযায়ী পদ না পেয়ে কমিটি ঘোষণার দিন রাতেই নিজের ফেসবুক আইডিতে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন রানা আহমেদ নামের এক ছাত্রলীগ নেতা।
এ বিষয়ে রানা আহমেদ জানান, নতুন উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত তাদের দুজনের বিয়ের কাবিননামা নেতাকর্মীদের হাতে হাতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তা ভাইরাল হয়েছে।
এসময় তিনি আরও বলেন, খোঁজ নিলে এই কমিটির অনেকের বিয়ের কাবিননামা পাওয়া যাবে। তার দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রলীগ করে আসছি। আগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি নোংরা পলিটিক্স করবো না বলেই স্বেচ্ছায় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।
এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসলাম উদ্দিন বলেন, আমার বিয়ের বিষয় সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। মূলত যারা পদ পদবী প্রত্যাশী ছিলো তারা পদ না পাওয়াই আমার বিরুদ্ধে নানা রকম মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাচীন ছাত্র সংগঠন। এই সংগঠনের জন্য অনেকেই পদ পদবী পেতে খুবই আগ্রহী। সেই কারনে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বিয়ের কাবিনের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সেটা আমি ফেক কাবিননামা। ওই কাগজে যে কাজীর নাম ছিলো উল্লেখ করা হয়েছে আমরা তার সাথে কথা বলেছি তারা বলেছেন তারা এই কাবিন করেননি। এমন কি যে মেয়ের সাথে বিয়ের কথা বলা হয়েছে তাদের পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তারাও জানিয়েছেন বিয়ের বিষয়টি সঠিক নয়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, আমাদেরতো কমিটি করতে হবে দীর্ঘদিন ওই উপজেলাতে কমিটি নেই। বিয়ের কাবিন ভাইরালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এমন অভিযোগ পাওয়ার পর আমাদের ছাত্রলীগের থেকে ওখানে যে কাজীর নাম আছে তাদের সাথে কথা বলেছিলাম তারা বলছে না এটা আমাদের দেওয়া না। ছাত্রলীগের বডি মিলিয়ে ওই যাচাই বাছাই করেছি এর কোন প্রমান আমরা পায়নি। আমরা ওটার কিন্তু কাগজ পায়নি ছবি পেয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পয়েছি। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যেসব নেতৃবৃন্দ তাদের নাম প্রস্তাব করেছিলো তারাও যাচাই বাছাই করেছে এঘটনা সঠিক নয়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, আমি জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি একটা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির কি হয়েছে এটা আমার জানার বিষয় নয়। আমাকে কেউ জানায়নি। আগে যখন কমিটি হতো তখন সমস্ত উপজেলার কমিটির বিষয় নলেজে থাকতো আমরা যাচাই বাছাই করে কমিটি করতাম। এখন আমাদের সুযোগ নাই কেন বলতে পারবো করতে পারছেনা কেন তাও আমার বলা সম্ভব নয়।
ছাত্রলীগের কমিটির বিবাহিতের যে নিয়ম আছে সেটা না হয়ে আছে সেটা যদি না হয় তাহলেতো আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী পাওয়া মোটেও অসুবিধার নয়। বিবাহিতদের আনা যাবে না যে নিয়ম আছে সেটা না মেনে বিবাহিতদের কমিটিতে আনা হয়েছে এটা ঠিক হয়নি। যদি তারা এনে থাকে তাহলে ভুল হয়েছে।
মিরর/সাইফুল