জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ও মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন নিশ্চিতকল্পে সদ্য পদত্যাগী স্বৈরাচারী প্রশাসন ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ই সেপ্টেম্বর) দুপুর বেলা ২টায় প্রশাসনিক ভবন চত্বরে এ মানববন্ধন আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর এবং শাখায় কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীবৃন্দ।
এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পদত্যাগী প্রশাসন ও তার দোসরদের দ্বারা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও নানাভাবে নির্যাতনের শিকারের অভিযোগ তুলেছেন।
এসময় কম্পিউটার অপারেটর জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নুরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন -অনিতা রাণী সূত্রধর, বিজয়, রোমান , রোকসানা, রোকেয়া প্রমুখ।
মানববন্ধনে তারা বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি আর অনিয়মে জড়িত ও বাকপটু ভিসি মো. কামরুল আলম খান, অদক্ষ ও চাটুকার রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফারুক হোসেন, ভিসির সকল অপকর্মের পরামর্শদাতা ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এস.এম ইউসুফ আলীসহ স্বৈরাচারী প্রশাসনের দোসরেরা পদত্যাগ করেন। ফলে এ অবস্থায় অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছি আমরা।
এসময় অভিযোগ করে তারা বলেন, আমাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক ও কর্মকর্তা বিমাতাসূলভ আচরণ করা শুরু করেন। আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার পাশাপাশি নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা এবং নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা স্বত্ত্বেও পদোন্নতি না দিয়ে বৈষম্য করে আসছে। আমরা বিষয়টি উত্থাপন করলে বিএনপি-জামায়াত আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি নানা হুমকি-ধমকি দেয় তারা।
প্রথম ভিসি অধ্যাপক ড.সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদের সময়ে সাবেক ফিশারিজ কলেজের এক কর্মকর্তা ও কয়েকজন কর্মচারীকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও নীতিমালা ২০২২’ অনুসারে আপগ্রেডেশন বা পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু একই নীতিমালায় মির্জা আজম ও ভিসি কামরুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সংস্থাপন শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রাসেল মাহমুদকে (বর্তমানে সেকশন অফিসার) পদোন্নতি দেওয়া হলেও অদক্ষ ও চাটুকার রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফারুক হোসেন, শিক্ষক
এসএম ইউসুফ আলী ও ইলিয়াছ উদ্দিন, সংস্থাপন শাখায় কর্মরত সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির হোসেন, জেনারেল ও এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার এস.এম. মোদাব্বির হোসেন, সেকশন অফিসার মির্জা মো. আব্দুল হালিম, ভিসির ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সোহাগ সরকারের প্ররোচনায় সদ্য পদত্যাগী ভিসি কামরুল আলম ৫/৬ জন কর্মচারীকে আপগ্রেডেশন দেননি।
এটাকে চরম বৈষম্যে ও স্বজনপ্রীতির নিকৃষ্টতম উদাহরণ উল্লেখ আরো বলেন- অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ৫০% চাকরিকাল গণনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা ৪ বছর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেলায় ২ বছর করা হয়।
এক্ষেত্রে সাব্বির হোসেন, এসএম মোদাঝির হোসেন এগিয়ে। তাদের যুক্তি- ফিশারিজ কলেজের কাউকে উপরে তুললে মাথায় চড়ে বসবে। তাদের উপরে উঠতে দেওয়া যাবে না। এরপরও আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে সাবেক ভিসি কামরুল আলম খান একটি কমিটি গঠন করেন। উল্লেখ্য, কাজ হোক আর না হোক কমিটি গঠনের বিষয়ে কামরুল কামর আলম খান বেশ সিদ্ধহস্ত। যেকোনো কাজে তার কাছে গেলেই কমিটি গঠন করতেন তিনি। আর সেসব কমিটিতে থাকতেন ইউসুফ আলী কিংবা তার অনুসারীরা। আর সহযোগী থাকতেন সাব্বির মোদাঝির কিংবা ভিসির পিও। কারণ এসব কমিটির মিটিং হলেই থাকতো সিটিং অ্যালাউন্স। ওই কমিটির সভা আয়োজন করলেও একটা গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
উল্লেখ্য, ওই কমিটি গত জুনের ১ তারিখে বৈঠক করে এবং বৈঠকে তাদের প্রেসক্রিপশন মতে, পূর্বের সিদ্ধান্ত অর্থাৎ আমাদের বেলায় ২ বছরই বহাল রাখা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ফের রেজিস্ট্রারের কাছে গেলে বলতো ভিসির কাছে যেতে। আর ভিসির কাছে গেলে বলতো ইউসুফ আর সাব্বিরের কাছে যেতে। তাদের কাছে গেলে তারা আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলতো। এমনকি না পুষালে চাকরি ছেড়ে দিতে বলে ইউসুফ। ভিসি-রেজিস্ট্রার এ বিষয়ে কিছু বলে না।
যেহেতু আমাদের প্রমোশন হচ্ছে না তাই স্বভাবতই আমরা তাদের কাছে যেতাম দাবি নিয়ে। বারবার গেলে বিএনপি-জামায়াত আখ্যা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করেছে। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার ভিসিকে অবহিত করলেও ইউসুফ-সাব্বির-মোদাব্বিরদের বাইরে যায়নি তারা। এমনকি কর্মচারীদের নানা বিষয়ে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাওসার আহমেদ স্বাধীন ও যুগ্ম-আহ্বায়ক তাইফুল ইসলাম পলাশসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে হয়রানি করেছে।
এসময় মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকা স্বত্তেও পদোন্নতি দেওয়া, ভিসি, রেজিস্ট্রার, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর, নিয়ম বহির্ভুতভাবে চুক্তিভিত্তিক, এডহক ও প্রশাসনিক পদে নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নারীদের হয়রানির অভিযোগের সুরাহা না করা, অনুমতি ছাড়া শিক্ষক-কর্মকর্তার বিদেশ যাওয়ার পরও ব্যবস্থা না, মনগড়া নীতিমালা তৈরি, ভুয়া বিল
ভাউচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ, অফিস না এসে অবৈধ ক্ষমতার প্রভাবে বেতন ভোগ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা হয়।
এসময় তারা আসন্ন নতুন প্রশাসনের নিকট বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি নিষিদ্ধ করা,নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আলোকে বৈষম্যের শিকার হওয়াসহ সকল কর্মচারীদের আপগ্রেডেশন নিশ্চিত করা,কর্মচারীদের নির্যাতন ও বৈষম্যের ঘটনায় জড়িত কতিপয় শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষ্যে যথাপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া, ভুয়া বিল-ভাউচার ও নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডার বাণিজ্যের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া,স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রশাসনিক নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান।