নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ার ক্ষোভে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ৮৬ নম্বর আকানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সফিউল্লাহ আফ্রাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর নানা অভিযোগ রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালে ওই বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গ্রামের অনেকেই এখন ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
আহত ওই শিক্ষার্থী জানায়, বৃহস্পতিবার স্কুলে যাওয়ার পর স্যার (প্রধান শিক্ষক) আমাকে গণিত বিষয়সহ সব বিষয় উনার কাছে প্রাইভেট পড়তে বলেন। স্যারকে বলি ‘আমি বাড়িতেই প্রাইভেট পড়ি’। এ কথা বলে সেখান থেকে ক্লাসে চলে যাই। তৃতীয় ঘণ্টায় সফিউল্লাহ স্যারের গণিত ক্লাস চলাকালে আমার কলমের কালি শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি আমার পেছনে থাকা সহপাঠীর কাছে কলম চাইলে স্যার দেখে ফেলেন। তখন স্যার উনার হাতে থাকা একটি বেত দিয়ে ঘাড় নিচু করে পেটাতে থাকেন। বেতটি ভেঙে গেলে স্যার পুনরায় আরেকটি বেত এনে আমার হাতে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করতে থাকেন। পরে আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে গেলে বাবা ও চাচারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর চাচা সোহেল আফ্রাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার ভাতিজিকে তার কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য বলতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার প্রধান শিক্ষক সফিউল্লাহ আফ্রাদ আবারো প্রাইভেট পড়তে বলে। আমার ভাতিজি বাড়িতে প্রাইভেট পড়ে বলে জানায়। এতে প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে ক্লাস চলাকালে কলম চাওয়ার অজুহাতে তাকে বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করে।
স্থানীয় অনেকেরই অভিযোগ, শুধু কলম চাওয়াকে কেন্দ্র করে পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর ওপর এমন নির্যাতন কেউ করতে পারে না। এই বাচ্চাটার শরীরের ক্ষতচিহ্নই প্রমাণ করে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই এমন নির্যাতন চালিয়েছে।
কারিমা বেগম নামে এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, ১৫-২০ দিন আগে আমাদের গ্রামের একজনের নাতিকে পিটিয়ে আহত করেন ওই শিক্ষক। পরে ওই শিক্ষার্থীর দাদা সালেহকে ধরে তার হাতে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দেন চিকিৎসার জন্য এবং বিষয়টি কাউকে না জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। এমনিভাবে আমার ছেলেকেও পিটিয়ে আহত করেছেন ওই প্রধান শিক্ষক।
শুধু তাই নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে পরীক্ষার ফি’র নামে অর্থ আদায়, স্কুলে এক প্রকার জোরপূর্বক প্রাইভেট পড়ানো, রাতেও স্কুলে প্রাইভেট পড়ানো, স্কুলের গাছ কেটে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া, স্কুলে সময় মতো উপস্থিত না হওয়া, স্কুল বাউন্ডারির এক পাশে ব্যক্তিগত আক্রোশে দেয়াল নির্মাণসহ আরো নানা অভিযোগ ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তুলে ধরেন গ্রামবাসী।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ জুনায়েদ বলেন, এসব বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেনি এবং কোনো লিখিত অভিযোগও পাইনি। তবে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়া হবে।
মনোহরদী ইউএনও হাসিবা খান বলেন, এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।