ক্রিড়া সাংবাদিক সামিউল আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু৷ যেদিন বাংলাদেশের ওডিআই খেলা হয় সেদিন খেলা শেষে রাতের বেলা ১০ মিনিট এর জন্য হলেও খেলা নিয়ে দুইবন্ধু বিশ্লেষণ করি৷ গেলো কয়েকদিন আগে আমি আর সামিউল গিয়েছিলাম মিরপুরের শেরেবাংলা ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মাঠে ঢুকতেই দেখা হলো এক সময়ের জাতীয় দলের খুব নিয়মিত একজন অলরাউন্ডার এর সঙ্গে। সুখ দুঃখের নানান প্রসঙ্গ আলোচনা হতে হতে একসময় তিনি বললেন, আমি তার কথা গুলো নিচে তুলে ধরছি
“আমরা দলে জায়গা পেলেও ব্যাট করার সুযোগ পাই ৬/৭ কিংবা ৮ নম্বরে। এই পজিশন গুলোতে খেললে বলের মেরিট বিবেচনা করে ব্যাট করা যায়না! মাথার উপর প্রেসার থাকে বল যেখানেই পড়ুক না কেনো চালিয়ে খেলতে হবে। উপমহাদেশে আমরা পাওয়ার হিটিং এ তেমন অভ্যস্থ নই। মুলত আমরা টাইমিং এবং ক্ল্যাসিক এর উপরেই ব্যাট করার চেষ্টা করি। যখন ক্রিজে আসি তখন হয়তো ৫/৭ ওভার থাকে। দ্রুত রাম তুলতে গিয়ে অল্প রান করেই আউট হয়ে যেতে হয়!
ডট বল হলে তিন রকমের প্রেসার থাকে। ওই সময়ে একটা ডট বল হলে দর্শক গালি দেয়, অপর সাইডে কোনো সিনিয়র ব্যাটার থাকলে সে রান নিতে তাড়া দেয় অথচ সে বুঝতে চায়না সেও যখন ক্রিজে এসেছে তখন শুরুর ১০/১২ টা বল দেখে খেলেছে! তিন নম্বর টা বেশি ভয়ানক সেটা হলো পরের ম্যাচে একাদশে থাকার অনিশ্চয়তা। এই ভয়টা বেশি কাজ করে। একবার জাতীয় দলের রাডার থেকে ছিটকে পড়লে কেউ আর মনেই রাখেনা৷ তাউ আমরা ভয়ে ভয়ে ব্যাট চালাই”।
ক্রিকেটার এর অভিযোগ গুলো যে যেভাবেই দেখেন না কেনো, তার কথাগুলো বাস্তব সঙ্গত। যখন সাকিব,তামিম, মুশি, মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজ রা খেলতে নামেন তখন তাদের মনে জায়গা হারানোর কোনো ভয় থাকেনা! তারা তাদের পছন্দের পজিশনে ব্যাট করে৷ কিন্তু একজন তরুণ যখন দলে সুযোগ পায় তার মনে জায়গা হারানোর ভয়, নিচে ব্যাটং করার চাপ সবকিছুই ভর করে। ক্রিকেটার এর সাক্ষাৎকার টা আজকে তুলে ধরার কারণ হলো, একজন তরুণ কে যথেষ্ট দলে সুযোগ দিতে হবে৷
সে ব্যর্থ হলেও ২০/২২ ম্যাচে অন্তত তাকে দলে রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে। দেখুন আফিফ, মিরাজ দলের প্রতিকূল অবস্থায় যেদিন একটু বেশি ব্যাট করার সুযোগ পাচ্ছে সেদিন বড় রান করছে! এই দুইজন তিন,চারে ব্যাট করলে নিয়মিত বড় রান করতে পারতো। অর্থাৎ তাদের সামর্থ্য আছে! একসময় সাকিব সাতে ব্যাট করতো, মুশফিক আটে ব্যাট করতো। তারা নিজেদের প্রমাণ করে আজকে দলের একটা স্তম্ভ হয়েছে। আফিফ, মিরাজ রা একদিন তিন চারে ব্যাট করবে, বিশ্বমানের খেলোয়াড় হবে৷
একসময় লিটন কে কেনো বারবার দলে রাখা হয় তা নিয়ে নির্বাচক, কোচদের কতো সমালোচনা হয়েছে! লিটন কিন্তু এখন দলের এক নম্বর ওপেনার! সেদিন যদি মিডিয়া ট্রায়াল দেখে নির্বাচক রা লিটন দের বাদ দিতেন তাহলে আজকে লিটন হারিয়ে যেতো! ক্রিকেট তারা আমাদের থেকে ভালো বুঝেন! তাই আমাদের উচিত তাদের সমালোচনা না করে বরং তাদের ফলাফল দেখার অপেক্ষা করা!
লেখকঃ শিবলী মাহাদী