দেবীগঞ্জে আব্দুর রহমান নামে এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ করার পর ২১ ঘণ্টা থেকে থানায় পড়ে আছে মরদেহ। ময়নাতদন্ত করা নিয়ে টালবাহানা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (৩০ মে) সকাল ৮টায় উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ বিজয়নগর এলাকায় আব্দুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন বলে পারিবারিক সূত্র জানায়। আব্দুর রহমানের বড় স্ত্রী রহিমা খাতুন স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ থাকায় একই দিন ৪ জনকে বিবাদী করে দেবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতেই আব্দুর রহমানের মরদেহ থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
মৃত আব্দুর রহমান পাশ্ববর্তী নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার আমবাড়ী বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
রহিমা খাতুনের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, আব্দুর রহমান রহিমা খাতুনকে বিয়ের ১৫ বছর পর নাসিমা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয় প্রথম স্ত্রীর সাথে। পরে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ বিজয়নগর এলাকায় বাড়ি তৈরি করেন। এরপর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেই স্থায়ী ভাবে থাকতেন আব্দুর রহমান। সম্প্রতি আব্দুর রহমানের মালিকানাধীন জমি রেজিস্ট্রি করে নিতে দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানরা নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
স্থানীয় সূত্র জানা যায়, বেশ কয়েক দিন থেকে আব্দুর রহমানের বাড়ি থেকে ঝগড়ার আওয়াজ আসছিল। তবে পারিবারিক বিষয় হওয়ায় কেউ প্রশ্ন করেনি এইসব বিষয়ে। শুক্রবার সকাল ১১টায় আব্দুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়টি দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে আবু নাসিম মোবাইলে প্রথম স্ত্রীর ছেলে বেলাল হোসাইনকে জানায়। খবর পেয়ে রহিমা খাতুন ছেলে বেলাল ও আরো দুই মেয়েকে সাথে নিয়ে বিজয়নগরের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর তাদের কাছে আব্দুর রহমানের মৃত্যুর কারণ স্বাভাবিক মনে হয়নি।
তাদের দাবি, আব্দুর রহমানের বাম হাতে, কপালে এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। শুধু তাই নয় গোসল শেষে কাফনের কাপড় পরানো হলেও রক্ত ঝরছিল। আব্দুর রহমানের মরদেহ এই অবস্থায় দেখার পর তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলনের প্রথম পরিবারের সদস্যরা।
এরপর তারা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের দাবি জানান। এরপর থেকে শুরু হয় নানা নাটকীয়তা। মেয়ে জামাই মোমিনুর ময়নাতদন্ত থামাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমদিকে পুলিশ ময়নাতদন্তে সায় না দিলেও প্রথম স্ত্রীর দাবিরে মুখে পরে মরদেহ দেবীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়।
প্রথম স্ত্রী ছেলে সাজেদুর রহমান বলেন, আমার বাবার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। গতকাল থেকে মরদেহ থানায় পড়ে আছে অথচ এখনো ময়নাতদন্ত করতেছে না। আজকে এসআই নাসিম নামে এক পুলিশ অফিসার আমাদেরকে বললো ডিসি স্যার নাকি যেতে বলেছেন। আমরা ৪ জন পঞ্চগড় গেছি। এডিসির রুমে নিয়ে গেছে কিন্তু আমার কোন জবানবন্দি নেয়ানি। সুরতহাল রিপোর্টে স্বাক্ষর চায়, আমি স্বাক্ষর দেইনি।
তবে দ্বিতীয় স্ত্রী নাসিমা বেগম ও তার সন্তানরা দাবি করেন, আব্দুর রহমান রাতে বাথরুমে গিয়ে পড়ে গেলে হাত ও মাথায় আঘাত পান। পরে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রেফার্ড করা হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরে রমেক হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে মারা যান আব্দুর রহমান।
এদিকে শুক্রবার রাত পৌনে ৮টায় দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোয়েল রানা সাংবাদিকদের মরদেহ নিয়ে আসার বিষয়ে এবং ময়নাতদন্ত হবে বলে জানান। কিন্তু শনিবার বিকাল ৪টা পেরিয়ে গেলেও মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়নি।
২১ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কেন আইনগত ব্যবস্থা এখনো নেয়া যাচ্ছে না এমন প্রশ্নে দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা জানান, আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। আমরা পরে এই বিষয়ে আপনাদের ডিটেইলস জানাবো।
দেবীগঞ্জ সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার সামুয়েল সাংমা জানান, সকালেই দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পোস্টমোর্টেমের জন্য প্রেরণের কথা বলেছিলাম ওসিকে। এখনো কেন প্রেরণ করা হয়নি খোঁজ নিচ্ছি। তবে মরদেহ পোস্টমোর্টেমে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, আমি ওসির সাথে কথা বলে দেখছি। দ্রুত আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেজ ময়নাতদন্তের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।