জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবিপ্রবি) আবাসিক হলে হাউজ টিউটরের গাফিলতিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষার্থী বাথরুমে পড়ে গিয়ে পায়ের রগ কেটে যাওয়া অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে দীর্ঘদিন বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি পঙ্গুত্বের আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
তার এই অবস্থার জন্য হলে পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি ও দায়িত্বরত শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করছেন সহপাঠীরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অন্তত ৮২ দিন পা নাড়াতে পারবেন না।
আহত শিক্ষার্থী মাশরুর জামান মোল্লা রোশান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি থাকতেন মির্জা আজম (প্রস্তাবিত বিজয় ২৪) হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে। গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) গোসল করতে গিয়ে হলের বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গুরুতরভাবে আহত হন তিনি। দুর্ঘটনায় তার পায়ের রগ কেটে গেলে প্রথমে জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
ইইই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, হল প্রভোস্ট ছাড়াও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে কোনো শিক্ষককে দেয়া হয়েছিলো। এটা আমরা জানতামই না। কোনো শিক্ষককে দেখিও নাই হলে এসে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা দেখাশোনা করতে। পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক দুই ভাবে এই ঘটনায় দোষী। এক. তার উপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি পালন করেনি। দুই. তিনি কোনো দিন হলে এসে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে খোঁজও নেননি।
একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাজিদ হোসেন বলেন, মাশরুরকে জামালপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মাসরুকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলেন। তখন আমরা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করি এবং খরচ হিসাবে ফরহাদ স্যার (প্রভোস্ট) এবং নিলিমা ম্যাডাম (মেডিকেল অফিসার) আমার কাছে তাৎক্ষণিক ৫ হাজার টাকা দেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাশরুরের ২ঘন্টা যাবৎ অপারেশন হয়। পরবর্তীতে ওষুধের জন্য টাকা প্রয়োজন হলে আমি রাত সাড়ে ১১ টার দিকে প্রভোস্ট স্যারকে ফোন দেই তখন তিনি আবার তিন হাজার টাকা পাঠান।
এ বিষয়ে জাবিপ্রবি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও হল ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. এনামুল বলেন,ক্যাম্পাস খোলার পরে কথা বলব।
বাথরুমে পড়ে মাশরুর আহত হওয়ার ব্যাপারে বলা হলে তিনি বলেন, এখন তো কোন স্টেপ নেওয়া যাচ্ছে না, তাই না?
গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত মাশরুর জামান মোল্লা (রোশান) জানান, আমি চাই হলে সুষ্ঠু থাকার পরিবেশ আসুক। আমি চাইনা আমার মতন আর কেউ এরকম ঘটনার সম্মুখীন না হোক। আমার এই ঘটনার কারণে হলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটা থাকার পরিবেশ হোক হলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট ড. মোঃ ফরহাদ আলী বলেন, আমাকে যখন টাকার কথা বলেছে, আমি দিয়েছি। হলে একজন সুইপার। হল সংস্কার ও স্থায়ী সুইপার এর জন্য আমি এই বছরের ১৭ই মার্চ রেজিস্টার বরাবর দরখাস্ত দিয়েছিলাম। পরিছন্নতার জন্য একজন, ইলেকট্রিক বিষয়গুলোর জন্য একজন, ডাইনিং এর জন্য একজন, এভাবে বিভিন্ন দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছিল। ২৫শে, নভেম্বর ২০২৪ সাধারণ সভায় সর্বপ্রথম দায়িত্ব বন্টন হয় এবং এনাম স্যার স্বেচ্ছায় হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
জাবিপ্রবি গণিত বিভাগের প্রভাষক ও হলের হাউজ টিউটর তোজাম হোসেন বলেন, ছুটির মুহূর্তে এমন একটি ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ছেলেটার সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। এছাড়া সবাইকে দায়িত্ব ঠিকভাবে পালনের জন্য প্রভোস্ট স্যার জোর দিয়ে বলেন তিনি।