1. admin@dailymirrorofbangladesh.com : mirror :
  2. mamun.cou16@gmail.com : Mamun : Mamun
  3. m.sohag21st@gmail.com : Sohag Shah : Sohag Shah
  4. shiblyhasan1212@gmail.com : shibly hasan : shibly hasan
  5. mohiuddinahmadtanveer@gmail.com : Mohiuddin Ahmad Tanveer : Mohiuddin Ahmad Tanveer
স্ত্রীর কিডনিতে প্রাণে বেঁচে প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস » দ্যা মিরর অব বাংলাদেশ
৪ঠা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| বর্ষাকাল| শুক্রবার| দুপুর ১:২৯|

স্ত্রীর কিডনিতে প্রাণে বেঁচে প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
  • ১৭ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে
love
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত

নিজের কিডনি দিয়েছিলেন স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে। কিন্তু সুস্থ হয়ে সেই স্বামীই জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া প্রেমে। যে স্ত্রীর আত্মত্যাগে তিনি বেঁচে ছিলেন, তাকেই মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এখন বসবাস করছেন পরকিয়া প্রেমিকার সঙ্গে। সাভারের কলমা এলাকায় ঘটে যাওয়া এই অমানবিক ঘটনায় স্ত্রী উম্মে সাহেদীনা টুনি নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন প্রতারক স্বামী মো. তারেকের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হলেও বর্তমানে জামিনে মুক্ত মো. তারেক।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে কলেজ পড়ুয়া তরুণী উম্মে সাহেদীনা টুনির সঙ্গে মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবক মো. তারেকের বিয়ে হয়। শুরুটা ছিল স্বপ্নময়, ভালোবাসা আর ভরসায় গড়া এক নতুন জীবনের সূচনা। বিয়ের এক বছর পরই তারেক ও টুনির সংসার আলো করে আসে একটি পুত্রসন্তান। ভালোবাসার বন্ধন আরও দৃঢ় হয় নবজাতকের স্পর্শে। সন্তানের নাম রাখা হয় আজমাইন দিব্য- যাকে ঘিরে তারা বুনেছিলেন সুখের এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন। তবে সেই স্বপ্ন খুব বেশি দিন টিকলো না।

বিয়ের মাত্র দুই বছরের মাথায় টুনি জানতে পারেন তার স্বামী তারেকের দুটি কিডনিই প্রায় অচল। তখন সদ্য এক সন্তানের মা টুনি, সংসার জীবনেরও শুরু মাত্র। কিন্তু ভালোবাসার টানে ভেঙে পড়েননি। স্বামীকে বাঁচাতে নেন ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। স্বামীর চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে নিজ বাড়িতেই খোলেন হোম বিউটি পার্লার, পাশাপাশি বুটিকসের কাজ শুরু করেন। মাস শেষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। আর পুরো টাকাটা ব্যয় করতেন তারেকের চিকিৎসায়।

এভাবে বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। নিজের জমানো টাকা, বিয়ের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা চালিয়ে যান তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শমতে, টুনিকে বছরে তিনবার অসুস্থ তারেককে নিয়ে ভারতে যেতে হতো। প্রতিবার প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হতো। যা পুরোটাই আসত নিজের আয় ও স্বর্ণালংকার বিক্রির টাকা থেকে।

অপরদিকে, অসুস্থ তারেক কোনো কাজকর্ম করতে পারতেন না। সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়ায় একটা সময় পরিবারও তার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কেবল স্ত্রী টুনি ও একমাত্র সন্তানই তার পাশে ছিল। একপর্যায়ে খরচ সামলাতে না পেরে নিজের মায়ের পেনশনের টাকাও স্বামীর চিকিৎসায় ব্যয় করেন টুনি।

২০০৮ থেকে ২০১৮— ১০ বছর ভারতেই চলল তারেকের চিকিৎসা। ২০১৯-এর শুরুতে চিকিৎসকরা জানালেন, এবার তারেককে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। নয়তো ডায়ালাইসিস করেই বাকিটা জীবন বাঁচতে হবে।

পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে টেস্টে মিললেও কেউ কিডনি দিতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে স্ত্রী টুনি সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজের কিডনি দিয়ে হলেও স্বামীর প্রাণ বাঁচাবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসক কৈলাশ নাথ সিং (কেএন সিং)-এর তত্ত্বাবধানে টুনি ও তারেকের কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়।

টুনি ভেবেছিলেন, স্বামী সুস্থ হলে মিলবে ভালোবাসা আর স্বস্তি। কিন্তু বাস্তবটা ছিল নির্মম। কিডনি পেয়ে সুস্থ তারেক ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়, আসক্ত হন অনলাইন জুয়ায়। এরপর শুরু হয় টুনির ওপর নির্যাতন। একসময় সেই নারী, যিনি জীবন দিয়ে বাঁচালেন স্বামীকে, তাকেই মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন তারেক। উঠেন ডিভোর্সি প্রেমিকার সঙ্গে।

উম্মে সাহেদীনা টুনি সাংবাদিকদের জানান, তারেককে কিডনি দেওয়ার পর আমার শরীর ক্রমেই ভেঙে পড়ছিল। সাতদিন আইসিইউতে থাকার পর যখন কেবিনে উঠি, তখন যেন এক ভিন্ন তারেককে দেখি। যে মানুষটার জন্য সব ত্যাগ করেছি, নিজের জীবনটাও বিলিয়ে দিতে চেয়েছি- সেই সুস্থ হয়ে আমাকে চিৎকার করে বকাঝকা শুরু করল, মারধরের হুমকি দিল। কারণ, আমার এক খালা নাকি অপারেশনের আগে টাকা পাঠাতে দেরি করেছিলেন!

এই দৃশ্য দেখে হাসপাতালের চিকিৎসকরাও হতবাক হয়ে যান। অপারেশন করা চিকিৎসক দুজনকে চেম্বারে ডেকে বলেন, যদি তোমার মা হয় তোমার জন্মদাতা, এই নারী তোমার জীবনদাতা। তার কারণেই তুমি ফিরে পেয়েছ নতুন জীবন। তার সঙ্গে এমন আচরণ কীভাবে করতে পারো? সেদিন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যান তারেক।

কিন্তু দেশে ফিরে আসার পর টুনির জীবনে নামে ঘোর অন্ধকার। সুস্থ তারেক কোনো কাজ বা ব্যবসা শুরু না করে উল্টো স্ত্রী টুনিকে নিজের উপার্জনের সব টাকা দিতে বলেন, আর শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে তিনি অনলাইন জুয়া ও পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন।

টুনি আরও বলেন, তারেক প্রায়ই কাজের অজুহাতে ঢাকায় যেত। পরে জানতে পারি, তাহমিনা নামে এক ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরকীয়া চলছে। মোবাইল ঘেঁটে পেয়ে যাই সেই প্রমাণ। এসব নিয়ে মুখ খুলতেই নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। এক সময় সে আমাকে পুরো বাড়ি তার নামে লিখে দেয়ার জন্য চাপ দেয়, ডিভোর্স চাইতে থাকে।

স্বামীর লাগাতার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত গত ২ ফেব্রুয়ারি সাভার থানায় স্বামী মো. তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন উম্মে সাহেদীনা টুনি। কিন্তু কৌশলী ও ধূর্ত তারেক খুব দ্রুতই পাল্টে ফেলেন নিজের মুখোশ। স্ত্রীকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মাত্র একদিন পর, ৪ ফেব্রুয়ারি থানায় মুচলেকা দিয়ে টুনিকে দিয়ে অভিযোগ তুলে নেন তিনি।

বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়ার পর তারেক আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নির্যাতনের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে টুনি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে। এরপর ২২ এপ্রিল ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন তিনি।

এ মামলায় ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন তারেক এবং প্রায় এক মাস কারাগারে থাকেন। কিন্তু ৪ জুন জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি সরাসরি গিয়ে ওঠেন তার পরকীয়া প্রেমিকা তাহমিনার বাড়িতে। সেখান থেকেই আবারও শুরু হয় টুনির উপর মানসিক চাপ- ডিভোর্স দিতে হবে এবং টুনির নামে থাকা বাড়িটি লিখে দিতে হবে তারেকের নামে।

এদিকে জামিনে মুক্তির পর থেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন তারেক। নিজের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ফেলায় বহুবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এমনকি তার আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকেও পাওয়া যায়নি।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © THE MIRROR OF BANGLADESH 2024