ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে কালো ব্যাজ ধারণ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মানববন্ধনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ এবং নিরাপদ শিক্ষাঙ্গনের দাবি জানান।
মানববন্ধনে শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ অনীকের সঞ্চালনায় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।
এসময় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তানজিলা বৈশাখী বলেন, “আওয়ামী আমলে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হয়নি। এমনকি সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পরেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে, অথচ বিচারের কোনো কার্যকর প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, সাম্য হত্যার পর একটি বিশেষ গোষ্ঠী যে ঘৃণ্য ও কুৎসিত আচরণ করেছে, আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা সাম্য হত্যার বিচার চাই—সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার।
তিনি আরো বলেন, হাসিনা একদিনে ফ্যাসিস্ট হননি। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিনি স্বৈরাচারী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। আজ যখন ইন্টারিম সরকার নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, তখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। ইন্টারিম সরকার পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট রূপ ধারণ করার আগেই সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন,
“আমরা লক্ষ্য করছি যে ধারাবাহিকভাবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা পারভেজকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতা সাম্যকেও হত্যার শিকার হতে হয়েছে। আমরা সাম্য হত্যার সুষ্ঠু বিচার এবং দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আজকে এই কর্মসূচিতে একত্রিত হয়েছি।”
জাবি ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফফান আলী বলেন, কিছুদিন আগে আমরা এখানে সমবেত হয়েছিলাম আমাদেরই এক ছোট ভাই পারভেজ কে হত্যার প্রতিবাদে। সেদিন বলেছিলাম আমরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছি। গনতান্ত্রিক আন্দোলন আমরা যেমন একসাথে কাজ করেছি, এখনো ঠিক একইভাবে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু আমার ভাই যখন হত্যা হচ্ছে তখন একটি গোষ্ঠী আমার ভাইয়ের লাশ নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে। একটি ছাত্রের জন্য তার বিশ্ববিদ্যালয় তার বাড়ি থেকেও নিরাপদ, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন একজন শিক্ষার্থী হত্যার শিকার হয়, তখন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর পদে থাকার যোগ্যতা রাখেন না। ইন্টেরিমকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কিছুদিন আগে ছাত্রদল নেতা পারভেজকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একইভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতা সাম্যকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার দায়ভার স্বীকার করে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঢাবির প্রক্টর ও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি।
তিনি আরো বলেন, সামনে জাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে এখনো ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসের হলগুলোতে অবস্থান করছে, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আমরা দাবি জানাচ্ছি—নির্বাচনের পূর্বেই এদের বিচারের আওতায় এনে ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে হবে।”
সোহাগ/মিরর