ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গ্রামে গ্রামে তাণ্ডব শুরু হয়েছে। রক্ষা পাচ্ছেন না বৃদ্ধ মা কিংবা বোন কিংবা স্ত্রী। বিভিন্ন গ্রামে পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। টহল দিচ্ছে অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অন্তত শতাধিক বাড়ি ঘরে হামলা ভাঙচুর লুটের ঘটনা ঘটেছে। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে নারীসহ কমপক্ষে ২০ জনকে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উপজেলাজুড়ে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর বাড়ি ছেড়েছেন অসংখ্য পরিবার। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিজয়ী নৌকার সমর্থকরা এ তান্ডল শুরু করেছে। এমন অভিযোগ করেছেন সতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে জেলার শৈলকুপা উপজেলার পাঁচপাখিয়া গ্রামে প্রার্থীর নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন একথা বলেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা করে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। টিভি, ফ্রিজ, হাড়ি, পাতিলসহ ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। লুট করা হয়েছে নগদ টাকা, স্বর্ণলঙ্কারসহ ধান। পুরুষরা মারধরের ভয়ে বাড়ি ছেলে পালিয়েছে। বাড়িতে হামলা ঠেকাতে গিয়ে অনেক মহিলা আহত হয়েছেন। সবশেষ ওই এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।
অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনে ভোট সুষ্ঠু হয়নি। জোরপূর্বক ভোট কেটে নেওয়া হয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দিয়েছে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিয়েও এ ধরনের অনিয়ম বন্ধ করাতে পারিনি। এ কারণে এই আসনের ২ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন, ৮ নম্বর ধলহরাচন্দ্র, ১৬ নম্বর নিত্তনন্দনপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ২১টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল প্রত্যাখান করছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে পুননির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ভোট গণনার আগেই নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা নৌকা বিপুল ভোটে জয় পেয়ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা করেছে। যার কারণে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা আমার সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর, আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ নগদ টাকা, স্বর্ণলঙ্কার এমনকি গবাদি পশুও লুট করে নিয়ে গেছে। আমার যারা পোলিং এজেন্ট ছিল তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা চালিয়েছে। কমপক্ষে ১০০ এর বেশি বাড়িতে তারা এ পর্যন্ত হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, এই ধরণের নির্বাচন দিয়ে সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে, প্রধানমন্ত্রীকে বলব, হয় সে এককভাবে তার লোকজন নিয়ে ক্ষমতাই থেকে যাক? যদি বলতে হয় ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার তাহলে কিছু জায়গা হলেও সেটা করা উচিৎ। শৈলকুপা উপজেলাতে এক থেকে দুই লাখ মানুষের ওপর অত্যচার একা কি করে এই লোকজনদের ঠেকাব? মার খেয়ে হাসপাতালে গেছে চিকিৎসা নিতে, তারপরও হাসপাতা থেকে বের করে আবারও তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে। আইশৃঙ্খলা বাহিনী খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাচ্ছে, তারা সরে চলে যাচ্ছে। তাদেরকে ধরতে পারছে না। এমন ঘটনায় পরিস্থিতি আরও অস্বাভাবিক হতে পারে। যার কারণে প্রধানমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তিনি সবশেষ বলেন, আমি মনে করি রিটানিং কর্মকর্তা এই আসনের ভোটকে মনুপোলেট করেছে। উনি পক্ষপাতিত্ব করেছে বলেই নৌকার লোকজন জোর করে ভোট কাটতে পেরেছে।
নির্বাচন অফিসের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা উপজেলা) আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬ হাজার ৩৩৬টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটর ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৭টি, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯টি। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই এমপি ৯৫ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল ট্রাক প্রতীক নিয়ে ৭৯ হাজার ৭২৮ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া ওই আসনে জাতীয় পার্টির মনিকা আলম লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯৪ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি আনিচুর রহমান আম প্রতীকে পেয়েছেন ২৩৮ ভোট , তৃণমূল বিএনপির কে. এ জাহাঙ্গীর মজমাদার সোনালী আঁশ প্রতীকে ১৬১ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিয়া আফরিন ফুলকপি প্রতীকে পেয়েছেন ১৫৯ ভোট।
এদিকে নৌকা প্রতীকের বিজয়ী প্রার্থী বর্তমান এমপি আব্দুল হাই এক প্রেস নোটে ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, যারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত হবে তাদের দায় দায়িত্ব নেওয়া হবে না। শৈলকুপা উপজেলার পরিবেশ শান্ত রাখার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। মানুষের জান-মাল রক্ষায় পুলিশ সচেষ্ট আছে। ঘটনা জানার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতদিন কাজ করছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে এখনও কেউ অভিযোগ দেয়নি। তাই কোনো মামলা হয়নি। আটকের ঘটনাও নেই।