আল বাইত স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে বিশ্বকাপে চমক দেখানো মরক্কোকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। থিও এরনঁদেজের দারুণ গোলে তারা এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান বাড়ান রন্দাল কোলো মুয়ানি।
অবিশ্বাস্য সব গল্পের জন্ম দিয়ে উঠে আসা মরক্কোর বুকে শুরুতেই আঘাত হানে ফ্রান্স। তাতে অবশ্য ঘাবড়ে যায়নি আফ্রিকার দলটি। একের পর এক শাণাতে থাকে পাল্টা আক্রমণ। ছড়াতে থাকে ভীতি। তবে, নিশ্চিত কয়েকটি সুযোগ হারানোয় নতুন কোনো বিস্ময় উপহার দেওয়া আর হলো না তাদের। আরেকটি দারুণ পারফরম্যান্সে নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ফাইনালে পা রাখল দিদিয়ে দেশমের দল।
আগামী রোববার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফাইনালে কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্স মাঠে নামবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। এমবাপ্পে অবশ্য আজ গোল পাননি।
কিলিয়ান এমবাপ্পের শট মরক্কোর এক খেলোয়াড়ের শরীরে বাঁধা পেলেও চলে যায় ডান পাশে ফাঁকায় দাড়ানো মুয়ানির কাছে। ঠাণ্ডা মাথায় ফ্রান্সের জার্সিতে প্রথম গোলটি করতে ভুল করেননি মাত্রই চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নামা মুয়ানি।
আর এই গোলেই নিশ্চিত হয়ে যায় টানা দ্বিতীয়বার ফ্রান্সের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠা।সেমিফাইনালের আগে মাত্র একটি গোল খাওয়া মরক্কোর দুর্ভেদ্য রক্ষণ দুর্গ জয় করতে মাত্র ৫ মিনিট লাগে ফ্রান্সের। গোলের উৎস সেই আঁতোয়ান গ্রিজম্যান। ডান প্রান্ত থেকে মরোক্কান ডিফেন্ডার জাওয়াদ আল ইয়ামিককে ফাঁকি দিয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ক্রস বাড়ান ফরাসি ফরোয়ার্ড।
প্রথম শটটা মরোক্কান রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের গায়ে লেগে ফেরত আসে এমবাপ্পের কাছে। ফিরতি শট আরেক ডিফেন্ডারে শরীরে লেগে চলে যায় বাঁ পাশে প্রায় ফাঁকায় দাড়ানো থিও এরনান্দেজের কাছে। বাঁ পায়ের দারুণ এক ভলিতে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ও জাতীয় দলের জার্সিতে দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যান ফ্রান্স ডিফেন্ডার।
মিনিট পাঁচেক পরেই সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। মিডফিল্ডার আজেদিন উনাহির ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট বাঁয়ে ঝাপিয়ে রুখে দেন ফ্রান্স অধিনায়ক উগো লরিস। ১৭তম মিনিটে আবার সুযোগ নষ্ট হয় মরক্কোর। এবার আর লরিসের পরীক্ষা নিতে পারেননি হাকিম জিয়েশ। ডান প্রা্ন্ত দিয়ে এগিয়ে যাওয়া চেলসি তারকার শট চলে যায় বাইরে।
জিয়েশ সুযোগ নষ্ট করতে না করতেই ব্যবধানটা দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিল ফরাসিরা। একটা লং পাস ধরে অলিভিয়ের জিরুর নেওয়া হাফ ভলি প্রতিহত হয় সাইড বারে।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে ফ্রান্সকে চেপে ধরে মরোক্কানরা। ৪৪ মিনিটে কাতার বিশ্বকাপের সেরা গোলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অল্পের জন্যই নাম লেখাতে পারেননি এল ইয়ামিক! জিয়েশের কর্নার ফ্রান্স গোলরক্ষকের হাত ঘুরে চলে যায় পেনাল্টি বক্সের মাথায় দাঁড়ানো মরোক্কান ডিফেন্ডার কাছে। পুরো শরীর শূন্যে ভাসিয়ে অ্যাক্রোবেটিক ভঙিতে ওভারহেড কিক নিলেন ইয়ামিক। পুরো শরীর ডানে ভাসানো লরিসের হাতের হালকা ছোঁয়া লেগে বারে লাগল বল।
বিরতির পরও বারবার চ্যাম্পিয়নদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে মরক্কো। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিট বল তো ছিল ফ্রান্সের সীমানাতেই। এক আক্রমণেই একাধিকবার গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি মরোক্কানরা। ৫৪তম মিনিটের সেই আক্রমণে একবার রাফায়েল ভারান ও আরেকবার ইব্রাহিমা কোনাতে রক্ষা করেন ফ্রান্সকে।
৭৫তম বল পায়ে ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ সম্ভাবনা জাগালেন আব্দেররাজাক হামদাল্লাহ। তবে ওই পর্যন্তই, দ্বিধায় পড়ে শটই নিলেন না। হারিয়ে ফেললেন বলও। এর পাঁচ মিনিট পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফ্রান্স।
বাঁ দিকে থুরামকে বল বাড়িয়ে বক্সে ঢুকলেন এমবাপে। ফিরতি পাস পেয়ে একজনকে কাটিয়ে প্রতিপক্ষের আরও তিন জনের মধ্যে থেকে শট নিলেন পিএসজি তারকা। একজনের পায়ে লেগে বল চলে গেল দূরের পোস্টে। ফাঁকায় পেয়ে ডান পায়ের টোকায় বল জালে পাঠিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়লেন ৪৪ সেকেন্ড আগেই দেম্বেলের বদলি নামা কোলো মুয়ানি।