বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই সবার নজর থাকবে মেসি-লুকা মদ্রিচের উপর। এ দুজনের পাশাপাশি বিশেষ নজর যাদের উপর থাকবে তাদের কথা নিশ্চয়ই আপনারাও ভাবছেন।
হ্যাঁ তারা হলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ও ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচ। যাদের কল্যাণেই সেমির লড়াইয়ে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে লাওতারো মার্টিনেজ নিজেদের শেষ পেনাল্টিটি জালে জড়িয়ে ছুটে গেলেন বাঁ পাশের কর্নার ফ্ল্যাগের কাছাকাছি জায়গায়। তাকে অনুসরণ করে মেসি ছাড়া বাকি সব সতীর্থও ছুটে গেলেন সেদিকেই।
ডান পাশে তখন আনন্দে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলেন মার্টিনেজ। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক জানতেন, এই ম্যাচের আসল নায়ক কে? তাই প্রিয় ‘দিবু’র কাছে সবার আগে গেলেন মেসি। সেই মানুষটির সঙ্গে উদ্যাপন করলেন, যিনি ‘এলএম-১০’-এর জন্য জীবন দিতে রাজি বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
আক্ষরিক অর্থে না হলেও প্রতীকী অর্থে ঠিকই নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন মার্টিনেজ। পেনাল্টি শটের শুরুতে ডাচ অধিনায়ক ফন ডাইকের শট ঠেকালেন শরীর শূন্যে ভাসিয়ে। এরপর স্টিভেন বের্গহুইসের নেওয়া দ্বিতীয় পেনাল্টিটি ঠেকিয়ে নিজেদের আত্মিবশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি ভেঙে দেন ডাচদের মনোবল।
যেখান থেকে শেষ পর্যন্ত আর ফিরতে পারেনি কমলা জার্সির দলটি। চিরায়ত দুঃখের রং কমলার আক্ষেপটা অন্তত আরও চার বছরের জন্য দীর্ঘায়িত করেন এই গোলরক্ষকই।
মার্টিনেজের নায়ক হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রূপকথার আরেক গল্প লিখে ফেলেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। ২৭ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক অবশ্য শুধু পেনাল্টিতেই নয়, ম্যাচজুড়ে অবিশ্বাস্য সব সেভ করে গেছেন।
টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট ব্রাজিলের সামনে ১২০ মিনিট ধরে প্রাণপণ লড়ে গেছেন। ম্যাচে গোল বাঁচিয়েছেন ১১টি। ২০১৪ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র-বেলজিয়াম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের গোলকিপার টিম হাওয়ার্ডের ১৫ সেভের পর এটি বিশ্বকাপের এক ম্যাচে কোনো গোলকিপারের সর্বোচ্চ সেভের রেকর্ড।
এ ছাড়া পরশু রাতে আরও একটি রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন দিনামো জাগরেবের এই গোলরক্ষক। ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনার সের্হিও গয়কোচিয়া এবং ২০১৮ সালে স্বদেশি দানিয়েল সুবাসিচের পর এক বিশ্বকাপে ৪টি পেনাল্টি শট ঠেকানোর কীর্তি স্পর্শ করেছেন লিভাকোভিচ।
রদ্রিগোর পেনাল্টি ঠেকানো লিভাকোভিচ এর আগে জাপানের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে পেনাল্টিতে গোল বাঁচান ৩টি। তার ওপর আস্থা ছিল কোচ জ্লাতকো দালিচেরও, ‘আমি জানতাম, সে এটা করে দেখাবে।’
মার্টিনেজ ও লিভাকোভিচের করে দেখানোর চ্যালেঞ্জটা অবশ্য এখানেই শেষ হচ্ছে না। আরও দুবার তাদের উল্লাসের রাত দেখার অপেক্ষায় থাকবেন সমর্থকেরাও। তাই সেমির লড়াইটা শুধু আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়ার নয়, মেসি-লুকা মদ্রিচ আর মার্টিনেজ-লিভাকোভিচের লড়াইও।