ভারতের রিয়েল এস্টেট ফার্ম সুপারটেক লিমিটেডের তৈরি নয়ডা টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা হবে। মাত্র ১২ সেকেন্ডে শক্তিশালী বিস্ফোরণের মাধ্যমে রাজধানী দিল্লির নিকটবর্তী আকাশচুম্বী ভবন দুটি আগামীকাল রোববার বিকেলে ভেঙে ফেলা হবে।
ভবন নির্মাণ বিধি মেনে তৈরি না করায় পাশাপাশি নির্মিত অ্যাপেক্স ও সিয়েন নামক টাওয়ার দুটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের ইতিহাসে এটিই দীর্ঘতম আকাশচুম্বী ভবন ধ্বংসের ঘটনা।
নয়ডা শহরের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্মিত এ টুইন টাওয়ারের উচ্চতা ৩২০ ফুট (৯৭ মিটার)। ৩০ তলার ভবন দুটিকে ধ্বংস করতে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহৃত হবে।
শক্তিশালী বিস্ফোরণের ফলে ভবন দুটি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। এ ভাঙার কাজে কমপক্ষে তিনটি দেশের প্রকৌশলীদের নিয়ে গঠিত একটি দক্ষ দল কাজ করবে। দলের একজন প্রকৌশলী অবশ্য টুইন টাওয়ারকে ‘প্রকৌশল জগতের সুন্দর কীর্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।
জননিরাপত্তা বিবেচনায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এভাবে ভবন ধ্বংসের বিষয়টি বিশ্বজুড়ে অনুমোদিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা ভারতের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ, টাওয়ার দুটি থেকে মাত্র ৩০ ফুট (৯ মিটার) দূরে একটি ১২ তলা আবাসিক ভবন রয়েছে। সেখানের ৪৫টি কনডোমিনিয়াম বিল্ডিংয়ে (একাধিক ফ্ল্যাটের ভবন কমপ্লেক্স) প্রায় ৭ হাজার লোক বাস করেন।
তবে রোববার ভোরে বিস্ফোরণের আগে ওই ভবনের সব বাসিন্দা ও পোষা প্রাণী এবং আশপাশের এলাকার পশুদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হবে। বিস্ফোরণের পাঁচ ঘণ্টা পর তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন।
এ ছাড়া টুইন টাওয়ারের পাশের একটি মূল এক্সপ্রেসওয়েতে ওই সময় যান চলাচল বন্ধ থাকবে। বিস্ফোরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯৮৪ ফুট (৩০০ মিটার) উচ্চতা পর্যন্ত ধূলিঝড় উঠতে পারে। তাই পাশের বিমানবন্দর ও বিমানবাহিনীকে ওই সময় ফ্লাইটের সব রকম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এদিকে টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্থল থেকে প্রায় ৫০ ফুট (১৫ মিটার) দূরে দিল্লিতে রান্নার গ্যাস সরবরাহের একটি ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন রয়েছে। বিস্ফোরণের ফলে এ গ্যাসলাইনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোর বাসিন্দারা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে সৃষ্ট কম্পনের ফলে তাদের ঘরবাড়ির ক্ষতি হতে পারে। তবে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ, নয়ডার সব ভবন ভূমিকম্প সহনশীল।
টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর প্রায় ৩০ হাজার টন ধ্বংসাবশেষ জমা হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এসব ধ্বংসাবশেষ যেন মানুষ বা সম্পত্তির ক্ষতি না করে তার জন্য পুরো টাওয়ার ঘিরে কাঠের বিশেষ কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ২০০টি ট্রাক তিন মাস ধরে ঘটনাস্থল থেকে সব বর্জ্য একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লান্টে নিয়ে যাবে।