ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভোলার সঙ্গে বরিশালসহ বিভিন্ন জেলার নৌ যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া রোগী, লাশবাহী স্বজন এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহনের যাত্রীরা।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকে ভেদুরিয়া ও লাহারহাট ফেরিঘাটে তৈরি হয়েছে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। এই দৃশ্য কোনো নাটক বা সিনেমার অংশ নয়; বাস্তবে ভোলাবাসী প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়শই এমন সংকটময় পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকেন।
ভেদুরিয়া ঘাটে বরিশালগামী রোগীসহ ৪টি অ্যাম্বুলেন্স সারাদিন অপেক্ষা করেও নদী পার হতে পারেনি। অন্যদিকে, লাহারহাট ঘাটে ভোলা অভিমুখী ৩টি লাশবাহী গাড়ি ও ৫টি অ্যাম্বুলেন্স আটকে আছে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায়। অসুস্থ রোগীরা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ছটফট করছেন চিকিৎসার অভাবে। আর স্বজনরা প্রিয়জনের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার অনিশ্চয়তায় চোখের জল ফেলছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল হয়ে ওঠায় ভোলা জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। ইতোমধ্যে হাতিয়া-ঢাকা, ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-আলেকজান্ডার, ভোলা-তজুমদ্দিন-মনপুরা এবং চরফ্যাশন বেতুয়া-মনপুরা রুটে সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে ভেদুরিয়া-লাহারহাট এবং ইলিশা-মজুচৌধুরীর ঘাট ফেরি সার্ভিসও স্থগিত রয়েছে।
ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. রিয়াজ হোসেন জানান, সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ জেলায় এমন দুর্যোগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নতুন কিছু নয়। এ পরিস্থিতি তুলে ধরে আমরা ভোলাবাসী সংগঠনের আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির নেতা গোলাম নবী আলমগীর বলেন, ‘ভোলা-বরিশাল সেতু এখন আর কেবল উন্নয়ন প্রকল্প নয়—এটি হয়ে উঠেছে মানবিক প্রয়োজন। প্রতিটি দুর্যোগে এই সেতুর অভাবে আমরা জীবনের ঝুঁকিতে পড়ি।’
সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান, ভোলার প্রায় ২২ লাখ মানুষকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত করতে দ্রুত ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।
বিকেলের দিকে আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে এলেও ফেরি চলাচল খুব সীমিত আকারে শুরু হয়, যেখানে কেবল লাশবাহী গাড়ি ও জরুরি প্রয়োজনে থাকা যানবাহনগুলো পার হতে পেরেছে বলে নিশ্চিত করেছেন লাহারহাট ঘাট কর্তৃপক্ষ।