চুরি করে নির্মাণাধীন পাকা ভবনের রান্নাঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে পালাচ্ছিল চোর। বাড়ির মালিক টের পেয়ে চোরের পা ধরে টানাটানি শুরু করেন।
এসময় চোর ধারালো বটি দিয়ে মালিককে এলোপাতারি কুপাতে থাকেন। এক পর্যায়ে দুজনের ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তিতে চোরের শরীরেরও কোপের আঘাত লাগে। দুজনই রক্তাক্ত জখম হন।
বুধবার (১০ আগষ্ট) দিবাগত রাত ২ টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে। পরে চিৎকার চেঁচামেচিতে স্থানীয়রা ছুটে এসে চোর মো. আব্দুল্লাহ (২৭) কে আটক করে এবং বাড়ির মালিক শাহাদুল ইসলামকে (৩৪) উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেন।
এরপর আজ বৃহস্পতিবার (১১ আগষ্ট) সকালে পুলিশ এসে আহত অবস্থায় দুজনকেই কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তাঁদের শরীরে একাধিক স্থানে রক্তাক্ত জখমের ক্ষত রয়েছে। বর্তমানে তাঁরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহত শাহাদুল ইসলাম উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের মৃত ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে এবং শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। আর চোর আব্দুল্লাহ একই ইউনিয়নের যদুবয়রা গ্রামের হাফেজপাড়া এলাকার আব্দুল মোমিনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক চুরির মামলা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন স্কুল শিক্ষক শাহাদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীরা ভিড় জমিয়েছেন। পাকা ভবন নির্মাণ হলেও দরজা, জানালা ও সাজসজ্জাকরণের কাজ শেষ হয়নি। ভবনের ভিতরের রান্নাঘর, দরজা ও বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে।
পুলিশ, শিক্ষকের পরিবার ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, বুধবার মধ্যরাতে রান্নাঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে চোর আব্দুল্লাহ ঘরে প্রবেশ করেন। আর কয়েকজন অজ্ঞাত চোর বাইরে অপেক্ষা করেন। এরপর ঘরের টিনের বাক্সে থাকা নগদ ৯৫ হাজার টাকা ও প্রায় ৪ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির পর মোটরসাইকেল চুরির চেষ্টা চালায়। রাত ২ টার দিকে স্কুল শিক্ষক শাহাদুল টের পেয়ে চোরকে ধরতে যায়। এসময় চোর রান্নাঘরের ভেন্টিলেটরে মাথা ঢুকিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে শিক্ষক চোরের দুই পা ধরে টানাটানি করে।
এরপর চোর রান্নাঘরে থাকা ধারালো বটি দিয়ে শিক্ষককে এলোপাতারি কুপাতে থাকে। দুজনের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে চোরের শরীরেও কোপ লাগে। পরে তাঁদের চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে বাইরে থাকা চোরগণ পালিয়ে যায় এবং আহত অবস্থায় চোর আব্দুল্লাহ ও বাড়ির মালিক শাহাদুলকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়।
আরো জানা গেছে, খবর পেয়ে পুলিশ চোরকে আটক করে এবং বাড়ির মালিককে হেফাজতে নেন। পরে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তাঁদের দুজনের শরীরের একাধিক স্থানে রক্তাক্ত জখম রয়েছে।
এবিষয়ে বাড়ির মালিক স্কুল শিক্ষক শাহাদুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলেন, রাত দুইটার দিকে ঘুম ভেঙে দেখি একজন চোর মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এসময় চিৎকার করে উঠলে চোর ভেন্টিলেটরে মাথা ঢুকিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে চোরের পা ধরে টানাটানি করলে বটি দিয়ে কুপাতে শুরু করে। এরপর ধস্তাধস্তিতে চোরেরও কোপ লাগে।
তিনি আরো বলেন, ধস্তাধস্তির সময় বাইরে থাকা চোরেরা বলছিল কুপিয়ে মারে ফেলে চলে আই। ঘরের আরেকটা কক্ষে বৃদ্ধ মা ছিল। মায়ের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে উদ্ধার করে।
আহত শিক্ষকের স্ত্রী ইলিমা খাতুন বলেন, ঘরে থাকা প্রায় ৯৫ হাজার নগদ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি হয়েছে। চোরের পকেট থেকে স্বামীর স্মার্টফোন ও ম্যানিব্যাগ পাওয়া যায়।
থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ধস্তাধস্তিতে চোর ও বাড়ির মালিক আহত হয়েছেন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।