কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু – পান্টি বাজার সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত জোতমোড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। কয়েক বছর আগেও বিদ্যালয়টিতে জরাজীর্ণ টেনশেড ঘরে চলতো পাঠদান কার্যক্রম। ছিলো শ্রেণিকক্ষ সংকটও। মনোরম পরিবেশের অভাবে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির সংখ্যাও থাকত কম।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের ধারায় বদলে গেছে বিদ্যালয়ের চিত্র। সেখানে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট বহুতল দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে খুশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
এবিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী অহনা খাতুন বলেন, আগে ভাঙাচুরা স্কুল ছিল। বৃষ্টির পানি পড়তো। তখন বান্ধবীরা স্কুলে আসত না। তবে এখন সুন্দর ভবন হওয়ায় স্কুল প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ১৫৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দুই বছর আগেও জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলত। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ছিলোনা। পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ ধার নিয়ে পাঠদান চলতো। তবে বর্তমান সরকার একটি ভবন করে দিয়েছে। এখন সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আমরা খুব খুশি।
ক্যাপশনঃ কুমারখালীর জোতমোড়া বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েক বছরের আগের চিত্র।
একই সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত গড়াই মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কয়েক বছর আগে সেখানেও জরাজীর্ণ ভাবে চলতো বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। ছিলোনা পর্যাপ্ত কক্ষ। সেখানেও একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বর্তমান সরকারের সময়ে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম আশরাফুল বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯৮ জন। বছরখানেক আগেও কক্ষ সংকটে শিক্ষক – শিক্ষার্থী নিয়ে খুব ভোগান্তিতে ছিলাম। এখন চারতলা ভবন পেয়েছি। সেখানে পর্যাপ্ত কক্ষ থাকায় খুব সুন্দরভাবে বিদ্যালয়টি চলছে। তাঁর ভাষ্য, ভবনটি বিদ্যালয় ও এলাকার চিত্র পাল্টে দিয়েছে।
একই সড়কে চৌরঙ্গী ফাজিল মাদ্রাসা নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানেও একটি চারতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করেছেন বর্তমান সরকার। এবিষয়ে মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সামাদ বলেন,প্রথম থেকে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্ধিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ছিল চরম কক্ষ সংকট। গত ১২ নভেম্বর স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ নতুন ভবনের উদ্বোধন করেছেন। এখন আর কোনো সংকট নেই। ভবন পেয়ে আমরা সবাই খুশি।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গেল পাঁচ বছরে কুষ্টিয়া -০৪ ( কুমারখালী ও খোকসা) আসনে প্রায় ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন ও উর্দ্ধমূখি সম্প্রসারণের কাজ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো প্রায় ৯ কোটি টাকার কাজ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর সংযোগ সড়ক হতে পান্টি বাজার এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে অন্তত আটটি দৃষ্টিনন্দন ভবন। ওই ভবন গুলোই এখন বাড়িয়েছে গ্রামের সৌন্দর্য। সন্ধায় জ্বলে উঠে প্রতিটি ভবনে আলো। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে আলোকিত ভবন গুলো যেন উন্নয়নের জ্বলন্ত স্বাক্ষী।
এসময় জোতমোড়া গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর লতিফ বলেন, ওই সড়ক দিয়ে দিনে রাতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ বার চলাচল করি। যতবার যায়, ঠিক ততবারই দুর থেকে চোখে পড়ে ভবন গুলো। রাতেও খুব সুন্দর দেখা যায়।
পান্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ( ভারপ্রাপ্ত) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন বলেন, গত পাঁচ বছরে আমার ইউনিয়নে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ হয়েছে। ভবনের কারনেই গ্রাম এখন শহর মনে হয়।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া -০৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের সকল খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করে চলেছে। ধারাবাহিক উন্নয়ননের অংশ হিসেবে আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৫ টি প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন ও সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে।