হোস্টিং নির্বাচন,প্রাথমিক গাইড: ব্লগিং শুরু করার সময় সঠিক হোস্টিং নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শুধু আপনার ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স এবং গতি নির্ধারণ করে না, বরং আপনার ব্লগিং অভিজ্ঞতাকে সহজ এবং সুবিধাজনক করে তোলে। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক হোস্টিং নির্বাচন করতে গেলে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. হোস্টিংয়ের ধরণ বুঝুন :
প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে কোন ধরণের হোস্টিং আপনার জন্য উপযুক্ত। সাধারণত ব্লগারদের জন্য নিচের কয়েকটি হোস্টিং অপশন পাওয়া যায়:
ক) শেয়ারড হোস্টিং: এটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি এবং প্রাথমিক পর্যায়ের ব্লগারদের জন্য উপযুক্ত। একাধিক ওয়েবসাইট একই সার্ভার শেয়ার করে। উপযুক্ত কেন?খরচ কম। ব্যবস্থাপনা সহজ। ছোট ব্লগের জন্য ভালো পারফরম্যান্স।
খ) ভিপিএস (VPS) হোস্টিং: শেয়ারড হোস্টিংয়ের তুলনায় উন্নত এবং কাস্টমাইজেশন সুবিধা বেশি। উপযুক্ত কেন?ট্রাফিক বেশি হলে ভালো। উন্নত নিরাপত্তা এবং পারফরম্যান্স।
গ) ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং: এটি বিশেষ করে ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগের জন্য তৈরি করা হয়। সবকিছু অটোমেটেড হওয়ায় আপনাকে কম পরিশ্রম করতে হয়। উপযুক্ত কেন?ওয়ার্ডপ্রেসে ব্লগ চালানোর জন্য দুর্দান্ত। ব্যাকআপ এবং আপডেট স্বয়ংক্রিয়।
২. স্পেস এবং ব্যান্ডউইথ বিবেচনা করুন
প্রথম দিকে আপনার ওয়েবসাইটে তেমন বেশি ভিজিটর থাকবে না। তাই আপনি এমন একটি হোস্টিং প্যাকেজ বেছে নিতে পারেন যেখানে পর্যাপ্ত স্পেস এবং ব্যান্ডউইথ রয়েছে। শেয়ারড হোস্টিং এ সাধারণত এই চাহিদা পূরণ হয়।
যা দেখতে হবে:
ক) ডাটা স্টোরেজ: ৫-১০ জিবি স্পেস শুরুতে যথেষ্ট।
খ) ব্যান্ডউইথ: আনলিমিটেড বা নির্দিষ্ট মাপের ব্যান্ডউইথ নিশ্চিত করুন।
৩. আপটাইম এবং পারফরম্যান্স চেক করুন
আপনার ওয়েবসাইট যত বেশি সময় অনলাইনে থাকবে, ততই বেশি ট্রাফিক এবং ভিজিটর পাবেন। এজন্য ৯৯.৯% বা তার চেয়ে বেশি আপটাইম গ্যারান্টি দেওয়া হোস্টিং সিলেক্ট করুন।
টিপস: দ্রুত লোডিং টাইম নিশ্চিত করতে SSD স্টোরেজ সমর্থিত হোস্টিং ব্যবহার করুন। সার্ভারের অবস্থান আপনার টার্গেট ভিজিটরদের কাছাকাছি হলে ভালো হয়।
৪. কাস্টমার সাপোর্ট বিবেচনা করুন : প্রথম দিকে সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। তাই এমন একটি হোস্টিং সিলেক্ট করুন যারা ২৪/৭ গ্রাহক সাপোর্ট প্রদান করে। লাইভ চ্যাট, ফোন এবং টিকিট সাপোর্টের অপশন থাকা উচিত।
৫. মূল্য এবং ফিচারের তুলনা করুন : বাজেটের মধ্যে ভালো ফিচার দেওয়া একটি হোস্টিং সিলেক্ট করুন। প্রথম দিকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল হোস্টিং এড়িয়ে চলা ভালো। কিছু জনপ্রিয় হোস্টিং কোম্পানি:
1. Bluehost: ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা সুপারিশকৃত।
2. Hostinger: সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো পারফরম্যান্স।
3. NameCheap: দারুণ সাপোর্ট এবং আপটাইম।
4. WPX Hosting: প্রিমিয়াম ব্লগ হোস্টিং (আপনার বাজেট বেশি হলে বিবেচনা করুন)।
৬. স্কেলিং সুবিধা নিশ্চিত করুন : আপনার ব্লগের ট্রাফিক বাড়ার সাথে সাথে হোস্টিং আপগ্রেড করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই এমন একটি হোস্টিং বেছে নিন যা ভবিষ্যতে সহজে আপগ্রেড করা যায়।
৭. ফ্রি ফিচার খুঁজুন : অনেক হোস্টিং কোম্পানি প্রাথমিক প্যাকেজে কিছু ফ্রি ফিচার দেয়। যেমন: ফ্রি ডোমেইন, ফ্রি SSL সার্টিফিকেট,ফ্রি CDN।
প্রথম দিকে শেয়ারড হোস্টিং বেশিরভাগ ব্লগারের জন্য একটি ভালো অপশন। পরবর্তীতে যখন আপনার ব্লগ জনপ্রিয়তা পাবে এবং বেশি ট্রাফিক আসবে, তখন ভিপিএস বা ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিংয়ে আপগ্রেড করতে পারেন।
সঠিক হোস্টিং নির্বাচন আপনার ব্লগিং জার্নির ভিত্তি তৈরি করে। তাই বাজেট এবং চাহিদা অনুযায়ী ভালো গবেষণা করে হোস্টিং বেছে নিন। সফল ব্লগিংয়ের জন্য এটা একধাপ এগিয়ে রাখবে।
লেখক: লুৎফর রহমান,টেকনোলজি উদ্যোক্তা ও প্যাসিভ ইনকাম এক্সপার্ট, রিসার্চার, এবং পাবলিশার গুগল এল এল সি