বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস এর আয়োজনে নদী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৯ শে জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এ নদী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থপতি ইকবাল হাবিব, বেরোবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও নদী সংগঠন রিভাইন পিপল এর পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহাগ আলী, গ্রীন ভয়েস এর প্রধান সমন্বয়ক ও প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর কবির, গ্রীন ভয়েস এর সহ-সমন্বয় হুমায়ুন কবির সুমন।
দিনব্যাপী এ নদী উৎসবে রংপুর বিভাগের প্রধান নদীগুলোর অবস্থা ও করনীয় নিয়ে উপস্থাপনা, নদী সংলাপ, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং নদী ও পরিবেশ নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ উৎসবে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন নদীর স্টল এবং এসব স্টলে ঐ সব নদীর পানি, বালু, ও নদীর প্রকৃত অবস্থা ও নদী রক্ষায় করণীয় তুলে ধরা হয়। এছাড়াও নদী নিয়ে প্রামাণ্য চিত্রও দেখানো হয়। কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার ও গাছ বিতরণ করা হয়।
এ সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও রংপুর মহাগনরের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেয়।
রংপুর সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে শিক্ষার্থী রণবীর বলেন, নদী উৎসবে এসে অনেক ভালো লেগেছে। নদী সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পেরেছি যা আগে জানতাম না। রংপুর বিভাগে দুই শতাধিক নদী রয়েছে তা জেনেছি এবং নদীর প্রয়োজনীতা সম্পর্কে জেনেছি।
রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে আসা আলফি আকরাম বলেন আজকে অনুষ্ঠান থেকে জেনেছি একটি এলাকায় নদী থাকলে কি সুবিধা আর না থাকলে কি ক্ষতি হয়।
বেরোবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও নদী সংগঠন রিভাইন পিপল এর পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন রংপুর বিভাগে দুই শতাধিক নদী রয়েছে কয়েকটি নদী ছাড়া বাকীসব বিপদগ্রস্থ। এই নদীগুলো কে বাঁচানোর জন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার। নদী দখল, দূষণ, ভরাট এসব থেকে নদীকে রক্ষা করতে হবে।
দেশ কে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে, সবুজ প্রকৃতি কে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে, জীব বৈচিত্র ও র্কষি নির্ভর অর্থনীতিকে বাঁচানোর স্বার্থে নদীকে রক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গ্রীন ভয়েস এর আজকের অনুষ্ঠানটি যথার্থই নদী উৎসবে পরিণত হয়েছ। নদী নিয়ে বিভিন্ন উপস্থাপনার মাধ্যমে মানুষের মাঝে নদী বোধ জাগানোর চেষ্টা করেছে।
বেরোবি লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক নিয়াজ মাখদুম বলেন, নদী হচ্ছে মায়ের মতো। মা যেমন আমাদের আগলিয়ে রাখে তেমনি নদীও দেশকে আগলিয়ে রাখে। নানা কারণে আমাদের দেশের নদীগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী নিয়ে এ ধরণের অনুষ্ঠান নদী রক্ষায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে।
গ্রীন ভয়েস বেরোবি শাখার সহ-সভাপতি সুরাইয়া আক্তার বলেন, আমাদের আজকের আয়োজনের স্লোগানটি ছিলো ’নদীকে জানো, নদীকে জানাও’। নদী উৎসব এর উদ্দেশ্য ছিলো মানুষ কে নদী সম্পর্কে জানানোর। আমরা সেই প্রচেষ্টাই করেছি।
নদী উৎসব এর আয়োজক গ্রীন ভয়েস বেরোবি শাখার সাধারণ সম্পাদক লিমন ইসলাম বলেন, আজকের নদী উৎসবে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি রংপুর বিভাগের নয়টি নদীর বর্তমান করুণ অবস্থা। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ফিরে আসে। আমরা চাই আগের মতো নদীগুলোতে স্রোত বইতে থাকুক এবং মানুষ ও পশু,পাখি তা থেকে উপকৃত হোক এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরে আসুক।
নদী উৎসব এর আয়োজক গ্রীন ভয়েস বেরোবি শাখার সভাপতি স্বপন মাহমুদ বলেন, রংপুরের জেলাগুলোর বিভিন্ন নদী থেকে পানি, বালি, পাথর, নদী পারের ফসল সংগ্রহ করে তা উৎসব মুখর পরিবেশে প্রদর্শনীর চেষ্টা করেছি। আমরা মানুষকে জানাতে চেষ্টা করেছি নদীর প্রয়োজনীতা।
আর নদীকে রক্ষা করতে হলে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সকল শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের প্রচেষ্টায় নদীগুলোতে আবারো প্রাণ ফিরে আনা সম্ভব