পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বলাশিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প। ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সেখানে বসবাস করা ১০০ পরিবারের লোকজন অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে এই প্রকল্পে বসবাসযোগ্য একটি ঘরও নেই। ঘরের লোহার অ্যাঙ্গেলসহ অন্যান্য মালামাল বিক্রি হচ্ছে ভাঙারি হিসেবে।
জানা যায়, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নদী ভাঙন ও অসহায় ভূমিহীন পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসতঘর দেয়ার উদ্যোগ নেন। চাঁদপুর জেলার ১৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের শিলারচর গ্রামের বলাশিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প।
এ প্রকল্পে ২০টি ব্যারাকে ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন ১০০টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়। তখন ব্যারাক থেকে নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। তবে গত দুই বছর ধরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতবাড়ি পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে।
এরই মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮০টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাকি ২০টি ঘরও নদীতে বিলীনের পথে। অনেকে ঘরের টিনের চালা খুলে নিয়ে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ ঘরের লোহার অ্যাঙ্গেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করছেন।
গত ৮ আগস্ট আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের কিছু মালামাল জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদে রেখেছে গ্রাম পুলিশ। সম্প্রতি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনও পরিবার বসবাস করে না। যেসব পরিবারের বসতঘর বিলীন হয়েছে, তারা আশপাশের চরের বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের তহশিলদার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নূরুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীর ভাঙনে বলাশিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পটি প্রায় ৯৫ শতাংশ বিলীন হয়ে গেছে। যেটুকু রয়েছে সেখান থেকে উপকারভোগীদের সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণের পর প্রায় ১০০টি পরিবার বসবাস করতো। পদ্মা নদীর ভাঙনে একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে এখন পুরোটা নদীর গর্ভে চলে গেছে। যেকোন সময় পুরো ব্যারাক নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফাহমিদা হক বলেন, নদী ভেঙে নিয়ে গেলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। এটি প্রাকৃতিক বিষয়। উপকারভোগীরা ঘর ছেড়ে অনেক আগেই চলে গেছেন। ঘরগুলো খালি ছিল। এখন তারা কোথায় আছেন তা ইউনিয়ন পরিষদ ও তহশিলদার দেখছেন। আর তারা যদি ইতোমধ্যে কোনও সম্পত্তির মালিক না হয়ে থাকে আমরা আবার তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবো।
ঘরের মালামালের বিষয়ে তিনি বলেন, ঘরের ২৫০ কেজি মালামাল জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদে রাখা আছে। জব্দ আছে। আগে যে টিনগুলো খোলা হয়েছে সেগুলো উপকারভোগীরা নিজেরাই নিয়েছেন। তারা সেগুলো বিক্রি করবে কী করবে না সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি।