কুমিল্লায় প্রেমিকার বাবা ও চাচার পিটুনিতে মো. মাহিন নামে এক যুবকের মৃত্যু এবং সে খবর শুনে মাহিনের বাবার মৃত্যুর ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত প্রেমিকার বাবা ও চাচাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। রোববার (৭ মে) রাতে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানাধীন মাঝিগাছা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার (৮ মে) দুপুরে র‍্যাব-১১ সিপিসি ২ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, প্রেমিকা তন্নী আক্তারের বাবা মাঝিগাছা এলাকার মৃত রঞ্জু মিয়ার ছেলে রওশন মিয়া ওরফে মুজা মিয়া (৪০) এবং তন্নী আক্তারের চাচা জাহাঙ্গীর মিয়া (৩২)। তারা উভয়েই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

র‍্যাব জানায়, গত রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে ছেলের মৃত্যুর সংবাদের বিষয়ে কথা বলার সময় জেলার কোতোয়ালি মডেল থানাধীন মধ্যম মাঝিগাছা গ্রামের বাসিন্দা হিরন মিয়া হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক হওয়ায় ছায়াতদন্ত শুরু করা হয়। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানাধীন মধ্যম মাঝিগাছা গ্রামের রোশন মিয়া ওরফে মুজা মিয়ার মেয়ে তন্নী আক্তারের সঙ্গে স্থানীয় চা দোকানদার হিরন মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ মাহিনের প্রায় ১ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের এ সম্পর্ক মেনে নেওয়া হয়নি। যার ফলে মেয়ের পরিবারের লোকজন বিভিন্ন সময় মাহিনকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল।

এরই জের ধরে ৪ মে রাতে মেয়ের বাবা মুজা মিয়া ও চাচা জাহাঙ্গীর আলম মাহিনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডেকে এনে বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় তারা মাহিনের মাথায় ও বুকে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন মাহিনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা ও ছাড়পত্র প্রদানের পর গত শনিবার (৬ মে) পরিবারের লোকজন মাহিনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে।

পরবর্তীতে রোববার (৭ মে) দুপুরে মাহিন হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে পরিবারের লোকজন পুনরায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছেলের মৃত্যুতে বাবা হিরন মিয়াও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে পরিবারের লোকজন তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনা জানাজানি হলে মেয়ের বাবা, মেয়ের চাচা ও পরিবারের লোকজন বাড়ি তালাবদ্ধ করে আত্নগোপনে চলে যায়। এ ঘটনায় মাহিনের মা রুজিনা বেগম গত রোববার (৭ মে) রাতে বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মেজর সাকিব জানান, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করি। গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মামলা রুজুর ৪ ঘণ্টার মধ্যে রোববার রাতেই কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানা এলাকা হতে মামলার ১ নম্বর আসামি রওশন মিয়া ওরফে মুজা মিয়া (৪০) ও ২ নম্বর আসামি জাহাঙ্গীর মিয়াকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, মেয়ের বাবা ও তার পরিবারের লোকজন মেয়ে তন্নীর সঙ্গে নিহত মাহিনের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। এরই প্রেক্ষিতে মেয়ের বাড়ির লোকজন প্রাথমিকভাবে মাহিনকে বার বার তাগাদা দিলেও মাহিন তার প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকে। তাই আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিম মাহিনকে অমানুষিক নির্যাতন করে বলে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেজর সাকিব হোসেন।