রাজধানীতে বাইক শেয়ার এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়! বিশেষ করে অফিসগামী মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের চলাফেলার জন্য পছন্দ তালিকার শীর্ষে বাইক রাইড শেয়ার! বিআরটিএ’র সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঢাকায় নিবন্ধিত বাইকের সংখ্যা ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯০টি। গতো ।
গত তিন বছরে বাইক রেজিস্ট্রার এর সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৩ হাজার। এর বেশিরভাগই অ্যাপভিত্তিক সেবা প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার্ড বাইক। যুক্তরাষ্ট্রের রাইড শেয়ারিং অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘উবার’-এর মোটরের প্রায় দেড় লাখ চালক রাজধানীতে মোটর চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকায় আরেকটি জনপ্রিয় বাইক রাইডিং পাঠাও’র আছে প্রায় দুই লক্ষাধিক রাইডার।
এ ছাড়াও রাজধানীতে সহজ ডট কম, স্যাম, ওভাই, ও-বোন ইত্যাদির আওতায় আছে আরো প্রায় ৭০ হাজার রেজিস্ট্রার্ড বাইক। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ এর কর্মসংস্থান হচ্ছে বাইক চালিয়ে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে চাকুরী হারিয়ে অনেকেই স্বাধীন পেশাটি বেছে নিয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক৷ এটি নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার আপত্তি হলো জান মালের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ করে হেলমেট নিয়ে।
ট্রাফিক আইনে হেলমেট ছাড়া যাতায়াত করলে আর্থিক জরিমানা সহ অনান্য দন্ত রয়েছে৷ ট্রাফিকের চোখে পড়লেই জরিমানা গুণতে হবে৷ তাই রাইডাররা হেলমেট ছাড়া কাউকে বহন করেনা৷ এটিও ইতিবাচক। এটা নিয়েও আমার কোনো অভিযোগ নেই।
আমার অভিযোগ হলো হেলমেট এর মান ও ধরণ নিয়ে৷ একটি বেসরকারি জরিপে উঠে এসেছে ঢাকা শহরে ৮০ শতাংশ বাইক রাইডার এবং যাত্রীদের ব্যবহৃত হেলমেট অত্যন্ত নিম্নমানের যেটি যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা তো দুরের কথা কিছু সময় যাত্রীদের দুর্ঘটনার কারণ হয়।
এই নিম্নমানের হেলমেট গুলো চলন্ত অবস্থায় বাতাসের চাপে মাথা থেকে খুলে রাস্তায় পড়ে দুর্ঘটনা হয়! চালকদের বক্তব্য দুই ধরনের৷ কেউ বলেন, যাত্রীরা ভালোমানের হেলমেট পড়তে চান না আবার কেউ বলছেন ভালো হেলমেট চুরি হয়ে যায়! বলাবাহুল্য দুটি যুক্তি ভিত্তিহীন৷ বেশিরভাগ বাইকার আবার অকপটে স্বীকার করে নেন “এটি পুলিশ প্রটেকশন মাত্র” এভাবেই আইনের সম্মান রক্ষা করে চলেছেন তারা। কিন্তু এই আইন যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে তার নূণ্যতম কোনো সুরাহা হচ্ছেনা৷
চলুন দেখে আসা যাক ঢাকা শহরে বাইক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান!
সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের তথ্যমতে, তিন বছরে মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪ হাজার ৭৯৯টি। এরমধ্যে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ৪ হাজার ৬৪৮টি। এতে প্রাণ গেছে অন্তত ৪ হাজার ৬২২ জনের। গত তিন বছরে মোট দুর্ঘটনার ৩১ শতাংশই ঘটেছে মোটরসাইকেলে। আর দুর্ঘটনায় নিহতদের ২৭ শতাংশই মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।
সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাইন্ডেশনের নিবাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেছেন, “সারাদেশে প্রায় আনুমানিক ৪০ লাখ মোটরসাইকেল আছে যার প্রায় ২০ লাখের উপরে চলছে ঢাকাতেই।” অথচ এই বিশাল সংখ্যক মানুষ প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন৷
তাহলে সমাধান কি???
ট্রাফিক আইনে মামলা খাওয়ার ভয়ে ২০ লক্ষ বাইকার যেহেতু হেলমেট পরিধান করছে তাহলে আইনটা কে আরেকটু পরিমার্জন করে হেলমেট এর কোয়ান্টিটি ও কোয়ালিটি যদি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে তবে রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যাবে হেলমেট। একটি ভালো মানের নির্ভরযোগ্য হেলমেট এর দাম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।
একজন রাইড শেয়ারকারী বাইকার মাসপ্রতি গড়ে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা উপার্জন করেন৷ তার পক্ষে একটি ভালো হেলমেট ক্রয় করা আহামরি কিছু নয়! তাই আমি কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ রাখবো, বাইকারদের মহাসড়কে চলাচলে অন্তত হেলমেট এর একটি ধরণ ও আকার নির্ধারণ করে দেওয়া হোক৷ তবে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু সংখ্যা দুটোই কমে আসবে৷ যাত্রী,চালক উভয়ই উপকৃত হবে।