জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি আবাসিক ছাত্র হলে এক নারী শিক্ষার্থীর প্রবেশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই বিষয়টি নিয়ে নানারকম আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে জেইউ আনটল্ড স্টোরি নামের একটি পেজ থেকে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরে অন্যান্য ফেসবুক পেজেও এটি ছড়িয়ে যায়।
বিষয়টি দৃষ্টিগোচরে আসলে পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছবিতে থাকা ওই মেয়েটির নাম ইশরাত জাহান, পড়াশোনা করছেন জাবির বাংলা বিভাগে ৫২ তম আবর্তন (২০২২-২৩ সেশন)। ছবিতে থাকা তার অন্যান্য বন্ধুরা হলেন একই বিভাগের একই সেশনের এফ এম প্রত্যয়, আমিনুল ইসলাম, সামিদুল ইসলাম ও মো. রাশেদ।
ঘটনার সত্যতা জানতে ইশরাত জাহানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ছবিটি অনেক আগের। সম্ভবত ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের। তখন কাজী নজরুল ইসলাম হলটি অফিসিয়ালি চালু হয়নি। এমনকি হলে কোনো নিরাপত্তা প্রহরি ছিল না। অনেকেই তখন হলে গিয়ে ছবি তুলেছিল। আমি সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলাম, কিছুক্ষণ থেকে চলে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও ৭-৮ জন বন্ধু ছিল। কিন্তু এখন হঠাৎ করে পুরনো একটি ছবি ভাইরাল করে আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা এক ধরনের ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করা হয়েছে বলেই আমি মনে করি। কেন হঠাৎ করে এখন এই ছবি ছড়ানো হলো, সেটা আমার জানা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ছেলেদের হলে ছাত্রীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে ইশরাত স্বীকার করেন, হ্যাঁ, এটা অবশ্যই আমার ভুল হয়েছে। তবে তখন হলে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।
ছবিতে থাকা আরেক ছাত্র সাদিমুল ইসলাম বলেন, এটা হল উদ্বোধনের দিনের ছবি। এ ছবিতে আমি আছি। হলে মেয়ে প্রবেশ দেখে আমরাই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ভাবলাম প্রথমদিন তাই হয়তো হল প্রশাসন ঢুকতে দিয়েছে। এখানে আমি সম্পূর্ণ হল প্রশাসনের ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছি।
আরেক শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনাটি গতবছরের ১৮ অক্টোবরে ঘটেছে। আমাদের বিভাগে শিক্ষার্থীদের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব হয়। ইশরাতকে খারাপ ভাষায় গালি দেওয়া হয়। গালিগালাজ করেও ক্ষোভ না মেটায় এটিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবিটি তোলা হয় নজরুল হলের ৫২৭ নম্বর কক্ষে।
ছবিতে থাকা অপর দুই শিক্ষার্থী রাশেদ ও প্রত্যয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে কাজী নজরুল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মামুন হোসেন বলেন, আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন অফিস টাইম নেই। আমরা অনলাইনে তদন্ত কমিটির নথি পাঠিয়েছি। কমিটির রিপোর্টের ওপর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এমরাশেদুল আলম বলেন, যেহেতু এটা হলের ভেতরের বিষয় তাই এ বিষয়ে ঐই হলের প্রভোস্ট ও ওয়ার্ডেন স্যাররা মিলে সিন্ধান্ত নিবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা বর্হিভূত কোনো কাজ করলে অবশ্যই তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২২ মে) থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সোহাগ/মিরর