ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরুইল ইউনিয়নের মহাবৈ ছাবালিচর গ্রামের বাসিন্দা মো. রাজিব মিয়া ওরফে হিরো আলম (৩২) জীবিকার আশায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে পাড়ি জমান সৌদি আরবে।
এই টাকার জোগান আসে ধারদেনা ও সহায়-সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে। এক বছর আগে স্থানীয় এক আদম ব্যবসায়ীর প্রলোভনে পড়ে বিদেশ যাত্রা করেন তিনি। কিন্তু সৌদি আরবে গিয়ে বাস্তবতা হয় ভিন্ন—চাকরি না পেয়ে চরম হতাশায় পড়েন রাজিব।
দেনাদারের তাগাদা পেয়ে দেশে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে সোমবার (২ জুন) সকালে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার শেষে আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে আজ সোমবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে চলছে মাতম। চিৎকার করে কান্না করছেন বৃদ্ধা মা আনোয়ারা বেগম (৮০)। বলছেন, ‘আমার বাজানরে মাইর্যালছে আজিজুইল্যা। হেরে তোমরা ধরো।আমি অহন কারে লইয়া বাচবাম।’
এ সময় হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। আজিজুল কে—জানতে চাইলে পরিবারের লোকজন জানায়, পাশের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের মো. আবেদ আলীর ছেলে। তার মাধ্যমে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে গত প্রায় এক বছর আগে সৌদি আরবের দাম্মাম যান।
কথা ছিল একটি ফ্যাক্টরিতে ৪০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। কিন্তু যাওয়ার পর আকামা না থাকায় কাজ না পেয়ে পালিয়ে ছিলেন। এ অবস্থায় ভাইয়ের সাহায্যে কিছু একটা করলেও মাসান্তে নিজের খরচের ব্যয় মেটেনি। এ অবস্থায় দেশের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পাওনাদাররা স্ত্রী চাঁদনি বেগমের কাছে তাগাদা দেয়। স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পাওনাদারের তোপের মুখে বেকায়দায় পড়েছিলেন।
এ অবস্থায় স্ত্রী চাঁদনি বেগম সৌদিতে স্বামী হিরো আলমের সঙ্গে ফোনে প্রায় প্রতিদিনই কথা বলতেন। কিন্তু হিরো আলম টাকা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করে সাফ জানিয়ে দিতেন। এক পর্যায়ে বাড়িতে যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
হিরো আলমের ভাবি নিপা আক্তার জানান, সোমবার সকাল ১১টার দিকে হিরো আলম একটি লাইভে এসে তার (ভাবির) মোবাইল নম্বরে ফোন করেন। তখন তিনি স্ত্রী চাঁদনির সঙ্গে প্রায় দুই মিনিট কথা বলেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে টাকা পাঠানো নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক হয়। হিরো আলম তখন ফোনটি ভাবির হাতে দিতে বলেন এবং জানান, তিনি বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে আছেন যেখানে নিজেরই খাওয়া-দাওয়া অনিশ্চিত, ফলে দেশের পরিবারে অর্থ পাঠানো তার পক্ষে সম্ভব নয়।
নিপা আক্তার আরও বলেন, এসময় তিনি অনুরোধ করেন, তার মা ও সন্তানদের যেন ভালোভাবে দেখা হয়। এরপর তিনি তার বড় মেয়ে আশা মনি (১২) এবং ছোট মেয়ে হাবিবা আক্তার (৭)-এর সঙ্গে কথা বলতে চান। ছোট মেয়ে হাবিবার সঙ্গে কথা বলার সময় আচমকা হিরো আলম একটি গাছে ফাঁসিতে ঝুলে পড়েন। মুহূর্তেই মোবাইল ফোনটির স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে যায়।
জানতে চাইলে নিহত হিরো আলমের ছোট মেয়ে হাবিবা বলে, তাকে ফোন করে বাবা জানায় ভালো করে পড়ালেখা করতে। আর তার জন্য দোয়া করতে। এই বলেই ফাঁসিতে ঝোলেন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর সৌদি আরবে অবস্থান করা বড় ভাই আরিফুল ইসলাম ফোন করে ভাই হিরো আলম ফাঁসিতে ঝুলে মারা যাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেন।
এলাকার লোকজন জানায়, হিরো আলম খুবই ভালো ছেলে ছিলেন। সংসারের ব্যয় মেটাতে পেরে একটা স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিল। কিন্তু আদম ব্যবসায়ীর কথার ফাঁদে পড়ে এখন সবই শেষ হলো। এ ঘটনার জন্য আদম ব্যবসায় আজিজুলের বিচার চান।
এ বিষয়ে আজিজুল মোবাইলে বলেন, ‘পাঠানোর তিন মাস পর আমার কোনো দায়িত্ব থাকে না। এই বলে ফোনটি কেটে দেন।’