ভারত উপমহাদেশে মুঘলদের আমল থেকে ব্রিটিশদের শাসন আমল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা চালু ছিল। ঐ জমিদারদের বাড়িকেই জমিদার বাড়ি বলা হয়। জমিদাররা প্রজাদের উপর তাদের শাসনকার্য চালাতেন এই বাড়ি থেকেই। তাই জমিদারদের এই বাড়িগুলো প্রজাদের কাছে অর্থাৎ সাধারণ মানুষের কাছে জামিদার বাড়ি নামেই পরিচিতি পায়।
তেমনি প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মৃতিবিজড়িত কালের সাক্ষী নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি।
স্থানীয়রা একে মঠেরঘাট জমিদার বাড়ি বলেও অভিহিত করে। শীতলক্ষ্যা নদীর কোলঘেঁষে গড়ে উঠা এ জমিদার বাড়িটির নাম করন করা হয়েছে এই গ্রামের নাম থেকে।
১৮৮৯ সালে রাম রতন ব্যানার্জী এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন পুরান ঢাকার তাঁতী বাজারের ব্যবসায়ী। মূলত সেই জমিদারীকে প্রসারিত করেন তার ছেলে বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী। তিনি জমিদারী পান ১৮৯৯ সালে। বিজয় বাবুর দুই ছেলে জগদীশ ও আশুতোশ। বড় ছেলে হওয়ার সুবাদে পরবর্তী জমিদার হন জগদীশ ব্যানার্জী। তাদের জমিদারী মূলত তিন পুরুষেই সীমাবদ্ধ ছিল।
মতান্তরে রামরতন ব্যানার্জি ছিলেন নাটোরের রাজার এক বিশ্বস্ত কর্মচারী। তার সততার পুরস্কার হিসেবে তিনি মুড়াপাড়া এলাকায় বেশকিছু জায়গির সম্পত্তি লাভ করেন। পরে ১৯০৯ সালে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জি এ বাড়ির কাজ সুসম্পন্ন করেন। তিনি এ এলাকার ক্ষমতাধর জমিদার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।জমিদারের দুইটি হাতি ও একটি শক্তিশালি লাঠিয়াল বাহিনীও ছিল বলে জানা যায়।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জগদীশ ব্যানার্জি এ দেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। তারপর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
সদর দরজার সামনে দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষা নদী। সে সময় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিলো নৌ-পথ, সে কথা মাথায় রেখেই বাড়িটি নদীর পাড় ঘেষে নির্মাণ করা হয়েছিলো। সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করেই বড় খোলা প্রান্তর। হাতের বামে দুইটি মন্দির কক্ষ, তার পেছনেই বিশাল আম বাগান। প্রান্তর পেরিয়ে গেলে বাঁধানো চারটি ঘাটবিশিষ্ট একটি পুকুর। পুকুরের সামনেই খোলা সবুজ মাঠ।
ছবি: মিরর অফ বাংলাদেশ
জমিদার বাড়ির মূল ভবনের পেছনে পাকা মেঝের একটি উঠান। উঠানটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। কারণ এর চারপাশ দ্বীতল দালানদ্বারা বেষ্টিত। উত্তর পাশেরটি অন্দর মহলের মন্দির।এই জমিদার বাড়িটিতে ৯৫টি কক্ষ মধ্যে রয়েছে বেশকিছু নাচঘর, আস্তাবল, মন্দির, ভাণ্ডার এবং কাচারি ঘর।
ভবনের সামনের পুকুরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পানি কম বেশি হওয়ার ব্যাপারটি ছিল শীতলক্ষা নদীর পানির সাথে সম্পর্কিত, কারণ এই পুকুর মাটির নিচ দিয়ে নদীর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
মূল ভবনের সম্মুখভাগ চকচকে দেখালেও প্রকৃত অবস্থা আসলে ভালো নয়। বারান্দার রেলিং, নকশা করা দরজা জানালাসহ শৈল্পিক সিঁড়ি এবং অন্দর মহলে প্রবেশের লৌহদ্বার সবই প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।
একদিনের পিকনিকের জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে দেড়’শ বছরে পুরনো ঐতিহ্যের ধারক এই জমিদার বাড়ি।সময় হলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি।