এক কালে আমাদের উপমহাদেশের বেশিরভাগ মানুষ পেঁয়াজ খেত না। এখন পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করার কথা ভাবাই যায় না। মসলা হিসেবে পেঁয়াজের রয়েছে উত্তুঙ্গ জনপ্রিয়তা। যাঁরা অন্যের রান্না করা খাবার খান, তাদের অবশ্য কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু যাঁরা নিজেদের জন্য কিংবা পরিবারের জন্য রান্না করেন, তাদের ঝক্কি পোহাতে হয়। পেঁয়াজ কাটার ঝক্কি। পেঁয়াজ নরম-রসালো মসলা। তাই কাটা কঠিন হওয়ার কথা নয়।
সেটা হয়ও না। যন্ত্রণাটা হয় চোখে। আমরা বলি পেঁয়াজের ঝাঁজ চোখে গিয়ে মানুষকে কাঁদিয়ে ছাড়ে। চোখ জ্বালা করে, পানি চলে আসে চোখে।
তাই অনেকেই পেঁযাজ কাটতে হবে ভেবে আগেই কান্নাকাটি শুরু করে দেন। কথা হচ্ছে, পেঁয়াজ কাটলে চোখ জ্বলে কেন? পানিই বা কেন আসে চোখে?
এসবের পেছনে রয়েছে রাসায়নিক পদার্থের কারসাজি। পেঁয়াজে রয়েছে সালফারের প্রোপাইল যৌগ। সেটার নাম সিন-প্রোপেনইথাইল-সালফার-অক্সাইড। সিন-প্রোপেনইথাইল-সালফার-অক্সাইড উদ্বায়ী পদার্থ।
অর্থাৎ সহজেই বাষ্প হয়ে যায়। বটিতে বা ছুরি দিয়ে যখন পেঁয়াজ কাটা হয় তখন এটা বাষ্প হয়ে ওপরে ওটে এবং আমাদের চোখের সংস্পর্শে আসে। পেঁয়াজ কাটার সময় এই যৌগ বিয়োজিত হয়ে সালফার ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে। চোখের জলীয় অংশ যেটাকে আমরা অশ্রু বলি, এর সংস্পর্শে সালফার ডাই অক্সাইড পরিণত হয় সালফিউরাস এসিডে ( H2SO3) । সালফিউরাস এসিডের জন্যই চোখে পানি আসে এবং চোখ জ্বলে?
কিন্তু কেন?
যখন এই যৌগটি চোখের সংস্পর্শে আসে, তখন মস্তিষ্কে এর খবর চলে যায়। সেই খবরটা মস্তিষ্ক চোখ জ্বালাপোড়া হিসেবে অনুভব করে। কারণ এটা চোখের জন্য আরাম দায়ক নয়।
মস্তিষ্ক এটাকে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রতিরক্ষা হিসেবে নির্দেশনা দেয় অশ্রু নির্গত করার। নির্গত অশ্রু এসে এসিডকে ধুয়ে বাইরে বের করে আনে। তখন মনে হয়, যিনি পেঁয়াজ কাটছেন, তিনি কান্নাকাটি করছেন।
সূত্র :
১. হোয়াই ডু অনিয়ন মেকস ইউ ক্রাই/ব্রিটানিকা
২. রসায়নবিজ্ঞান/ পার্থসারথি চক্রবর্তী।