শরীয়তপুরে নেশার টাকা জোগাতে নিজের দেড় মাসের শিশুকে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে মা-বাবার বিরুদ্ধে। সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে শরীয়তপুর সদর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড চরপালং গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা ইব্রাহিম খলিল ও মা শ্রাবণী বেগমকে আটক করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইব্রাহিম খালিল (২৬) শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর গ্রামের শওকত হাওলাদারের ছেলে।
শওকত হাওলাদার পরিবার নিয়ে শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড চরপালং গ্রামের মতি ভেন্ডারের ভাড়াবাসায় বসবাস করেন। ছেলে ইব্রাহিম খলিলও পরিবারের সঙ্গে চরপালং এলাকায় ভাড়াবাসায় থাকেন। চার বছর আগে ইব্রাহিম খলিল ঢাকার জুরাইন এলাকার শ্রাবণী নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। ইব্রাহিম-শ্রাবণী দম্পতির আড়াই বছর বয়সী এক মেয়ে ও দেড় মাস বয়সী এক ছেলেসন্তান রয়েছে। ইব্রাহিম মাঝেমধ্যে নির্মাণশ্রমিকের কাজে যেতেন।
ইব্রাহিম-শ্রাবণী দম্পতি মাদক সেবন ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ তাদের মা-বাবা ও এলাকাবাসীর।
নেশার টাকা জোগাতে নিজের দেড় মাসের ছেলেকে প্রতিবেশী এক নারীর কাছে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন ইব্রাহিম-শ্রাবণী দম্পতি। বিষয়টি জানতে পেরে ছেলে ইব্রাহিম খলিল ও ছেলের বউ শ্রাবণীর বিরুদ্ধে পালং মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ঝরনা বেগম। অভিযোগের ভিত্তিতে ইব্রাহিম খলিল ও শ্রাবণী বেগমকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের হস্তক্ষেপে ৩১ হাজার টাকা পরিশোধ করে নাতিকে ফিরে পান ঝরনা বেগম। পরে মুচলেকা দিয়ে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পান ইব্রাহিম খলিল ও শ্রাবণী বেগম।
এ ব্যাপারে ঝরনা বেগম বলেন, আমার ছেলে ইব্রাহিম খলিল ও ছেলের বউ শ্রাবণী নেশার সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে তাদের নিষেধ করলে তারা আমাকে ও আমার স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে। নেশার টাকা জোগাতে তারা সোমবার আমার দেড় মাসের নাতিকে বিক্রি করে দেয়। আমি জানতে পেরে পুলিশের সহযোগিতায় আমার নাতিকে উদ্ধার করি।
মাদক সেবন ও মাদক কারবারের কথা স্বীকার করে ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে এক বন্ধুকে দিয়েছিলাম ইয়াবা আনার জন্য। কিন্তু বন্ধু আমাকে মাল না দিয়ে টাকা মেরে দেয়। বাবার টাকা পরিশোধ করার জন্য বাধ্য হয়ে আমি আমার ছেলেকে ৩১ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। ছেলেকে বিক্রি করে বাবার পাওনা টাকা দিয়েছি। এ ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিল না।
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঝরনা বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে ইব্রাহিম খলিল ও শ্রাবণী বেগমকে আটকের পর শিশুটিকে উদ্ধার করে তার দাদি ঝরনা বেগমের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে ঝরনা বেগম অভিযোগ তুলে নিলে মুচলেকা নিয়ে ইব্রাহিম ও শ্রাবণীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।