বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ জসিমের কলেজপড়ুয়া মেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গলায় ফাঁস দেয় সে। পরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
স্বজনেরা জানান, গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নে শহীদের ওই কিশোরী মেয়েকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তার পরের দিনই সাকিব মুন্সী নামে অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার সাকিব জামিন পেয়েছে- এমন সংবাদে মর্মাহত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই কিশোরী।
এ বিষয়ে শহীদ জসিমের চাচাতো ভাই কালাম হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, ওই কিশোরীর মরদেহ বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে নেওয়া হবে।
এদিকে খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন বিএনপি, এনসিপি ও জুলাই ফাউন্ডেশনের নেতাকর্মী ও কর্মকর্তারা। তারা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, ‘এই কিশোরীর মতো নিজের লজ্জা জন্য ঢাকার যেন ফাঁস দিতে না হয়, নিজের জীবন যাতে দিতে না হয় সেটা এই সরকার যে কয়দিন আছে সেটা নিশ্চিত করুক। এর চেয়ে বেশি আর কি বলব! বলার কিছু নেই। আর যদি তারা এইটুকু দ্বায়িত্ব পালন করতে না পারে তাহলে অবশ্যই আমরা বলব একটা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্বটা ছেড়ে দিক।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, কখনও কোনো সান্ত্বনা শব্দ দিয়ে দেওয়া যায় না। তার মা জিজ্ঞেস করছিল একটা কথাই- তোমরা আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবা কি না! এর কোনো উত্তর আমাদের কাছে নেই। এই পৃথিবীতে আর সম্ভব না। আমরা শুধু এই অন্তর্বর্তী সরকারসহ আগামীর বাংলাদেশে যারাই এই গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বগুলোতে থাকবে, একটা জিনিসই তাদের কাছে চাইব তা হলো ধর্ষকের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এমন অনেক জায়গা আছে যে জায়গাগুলোতে আসলে এত সুশীলতা দেখিয়ে লাভ নেই। একটা সময় ছিল এই বাংলাদেশে যখন প্রচুর অ্যাসিড নিক্ষেপ হতো। যখন অ্যাসিড নিক্ষেপের শাস্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড করা হলো, এরপর থেকে কিন্তু এটা অনেক কমে গিয়েছে। সুতরাং এমন কিছু মানুষ আছে আসলে, যারা যেমন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে সেরকমই শাস্তি দিতে হবে।’
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন মেয়েটি তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। পথে নলদোয়ানী এলাকা থেকে সাকিব ও সিফাত তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর ঘটনার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় দুজনের নাম উল্লেখ করে দুমকি থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী।