ই-ওয়েস্ট বা ইলেকট্রনিক বর্জ্য হলো পরিত্যক্ত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, যেমন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টেলিভিশন, এবং এয়ার কন্ডিশনার, যা ব্যবহারের অযোগ্য হলে পরিবেশে ফেলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩ মিলিয়ন টন ই-ওয়েস্ট উৎপন্ন হচ্ছে, যা দ্রুত বৃদ্ধির সাথে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে।
এসব বর্জ্য থেকে নির্গত সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, ও ব্রমিনেটেড প্লাস্টিকের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক মাটি, পানি ও বাতাসকে দূষিত করছে। এই দূষণ শ্বাসতন্ত্র, কিডনি ও হরমোনজনিত সমস্যার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। বাংলাদেশের ই-ওয়েস্ট সমস্যার একটি বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ব্যবস্থাপিত হয়, যেখানে প্রায় ৫০ হাজার শিশু শ্রমিক রয়েছে।
তাদের অনেকেই বিপজ্জনক অবস্থায় ই-ওয়েস্ট পুনর্ব্যবহারের কাজ করে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালে ‘ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস’ প্রণয়ন করেছে, যা দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তবে কার্যকর বাস্তবায়ন এবং সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। আইন প্রয়োগে শক্তিশালী নজরদারি, প্রস্তুতকারকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা, এবং সাধারণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করে যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যেতে পারে। তাছাড়া, ই-ওয়েস্ট থেকে পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে মূল্যবান সম্পদ সংগ্রহ করা যেতে পারে, যা অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে সহায়ক হবে।
দেশের সার্কুলার ইকোনমিতে ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম, যেখানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, কর্পোরেট সংযোগ, ও সাধারণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
সর্বশেষে বলা যায়, সঠিক ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা না শুধুমাত্র পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের সুরক্ষা দেবে, বরং এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে।