শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গত ১৩ ই এপ্রিল ইলেকট্রিক কার্ট চালু করে জাবি প্রশাসন। কিন্তু চালু হওয়ার দেড় মাস না পেরুতেই হিতে বিপরীত প্রতিক্রিয়া উঠে আসে শিক্ষার্থী মহল থেকে। ১৩ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছিল ৪ টি ইলেকট্রিক কার্ট। এরপর আরও ৪ টি যুক্ত করা হয়।
কিছুদিন পরেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৪ টি ইলেকট্রিক কার্ট নিয়ে যাওয়া হলেও এখন আবারও তা রুটে চলছে। ইলেকট্রিক কার্টগুলো চলাচলের জন্য প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ক্লাস, বিভাগ, আবাসিক হলের কথা বিবেচনা করে সময় ও রুট নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের অনেকাংশের অভিযোগ এই যে, তারা সময়মতো কার্ট দেখতেও পারে না।
ইতিহাস বিভাগের ৫১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী হাফসা বলেন, আমি প্রায়ই হল থেকে বিভাগে যাওয়ার জন্য বের হই এবং কার্টের অপেক্ষা করি। কিন্তু ক্লাসের সময় পেরিয়ে গেলেও কার্ট এর দেখা মেলে না।
পায়ে চালিত রিকশা ব্যবস্থার সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পায়ে চালিত রিকশা অনেক ধীরগতিতে যায়। আর এখানে ভাড়াও অত্যাধিক রাখে যা আসলে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বহন করা আমাদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
ইলেকট্রিক কার্টগুলোর রুট এবং সময় কিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে এ সম্পর্কে এক শিক্ষার্থী তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে জানান, বেশিরভাগ কার্টের রুট বিশমাইল বরাবর কিন্তু জেনারেটর বাজার দিয়ে ছেলেদের হলের দিকে কোনো কার্ট পাওয়া যায় না। আর রফিক জব্বারের দিকেও পাওয়া যায় না। বিশমাইলের দিকে কার্ট অত লাগে না কিন্তু ছেলেদের হলগুলার দিকে কার্ট দেওয়া জরুরী।
এই হলের দিকে কার্ট দিলে লস খাওয়ার কথা না! কার্টের রুট ঠিক করা নিয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তন্ময় জানান, সব রোডের চেয়ে ডেইরি গেট থেকে রফিক-জব্বার চত্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কার্ট দেওয়া উচিত। কারণ এ রোডে প্রায় ৪০০০+ ছাত্র যাতায়াত করে থাকে।
তিনি আরও জানান, প্রশাসনের প্রতি একটাই নিবেদন,অটোরিকশার বিকল্প হিসেবে যদি এগুলো চালুই করে থাকেন তাহলে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সেগুলো দিয়ে মানসম্মত সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করুন। আর নাহলে এসব ইলেকট্রিক কার্টের নামে প্রহসন বন্ধ করুন। দিনশেষে, অটোরিকশার কোনো বিকল্প নেই। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব প্যাডেলচালিত রিকশা,কার্ট বাদ দিয়ে অটোরিকশা চালু করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
রুট ও সময় নির্ধারণের সমস্যা ছাড়াও সম্প্রতি আরও একটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এ সম্পর্কে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমি বাসায় যাওয়ার জন্য কাজী নজরুল ইসলাম হলের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। একটি কার্টকে ডাক দিলে বলে চত্বর থেকে ঘুরে আসি। কার্টটি ঘুরে আসলো একটা পুরো ফ্যামিলির মেম্বারদের নিয়ে যাদের সবাই ছিল বহিরাগত।
এদিকে আমার দুই হাতে দুইটা ব্যাগ নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি। সম্প্রতি আসন্ন ৩১ জুলাইয়ে জাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসন থেকে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও তা পালনে প্রশাসনের স্পষ্ট গাফিলতি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসন বহিরাগত নিষিদ্ধের একটা মুলা ডেইরি গেইটে ঝুলায়া রাখছে। কিন্তু ডেইরি গেইট দিয়ে বহিরাগতরা দেদারসে প্রবেশ করাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চালু করা ইলেকট্রিক কার্ট যখন শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে ব্যর্থ তখন এসব নানামুখী সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকা কি তা সম্পর্কে জানতে চাইলে জাবি প্রক্টর বলেন, ইলেকট্রিক কার্টের নানামুখী সমস্যা ও অটোরিকশা চালুর ব্যাপারে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) স্যারের সাথে কথা বলতে পারেন।
বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধের প্রজ্ঞাপন জারির পরেও কেনো এতো বহিরাগত প্রবেশ করছে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা প্রবেশ করছে তারা আমাদেরই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের গেস্ট। আমরা বহিরাগতদের কোনোভাবেই প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। এছাড়াও নিয়মিত চেকিং এর জন্য আমরা প্রতিজনের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি তারা আমাদের শিক্ষার্থী কি না।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, আমরা খেয়াল করেছি যে ইলেকট্রিক কার্ট আশানুরূপ সমাধান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের একটু সময় দিতে হবে এবং সকলকে সহযোগিতামূলক আচরণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝে আরও কিছু কার্ট যুক্ত করবো এবং তখন আমাদের কার্টের সংখ্যা হবে প্রায় ২৫ টি। আমাদের রুট নিয়ে যে নানামুখী সমস্যা দেখা দিচ্ছে তার একমাত্র কারণ হলো কার্টের স্বল্পতা। তাই আশা করছি কার্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
সোহাগ/মিরর