আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতে হলে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার চাইতেও বেশি মোকাবিলা করতে হয় দলীয় ষড়যন্ত্র। অনেকেই বলতে পারেন, ১৪ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকার কারণে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে এমনটা হচ্ছে ৷
কিন্তু না! ইতিহাস যদি পর্যালোচনা করা হয় দেখা যাবে বাংলাদেশ জন্মের (স্বাধীনতা)পরেই জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে নিয়ে শুরু হয় ষড়যন্ত্র যার ইতি ঘটে ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট কালরাতে! এরকম হাজারো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। কেউ জীবন হারিয়েছেন কেউবা পদপদবী হারিয়েছেন৷ এমনকি দলীয় প্রধান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দলীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে ১/১১ এর সময়ে।
সর্বশেষ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র জনাব জাহাঙ্গীর আলম Zahangir Alam’s Archive এর বিরুদ্ধে আরেকটি সাকসেসফুল ষড়যন্ত্র ঘটাতে দেখলাম দলীয় একপক্ষের দ্বারা। ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর কল রেকর্ড যার কোনো প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা নেই সেটাকে কেন্দ্র করে একজন মেয়রকে প্রশাসনিক পদ থেকে শুরু করে দলীয় পদ পদবী সবকিছু কেড়ে নেওয়া এটি একটি দু:খজনক ঘটনা৷ উনাকে অন্তত আত্মপক্ষ সমর্থন এর সুযোগটুকু দেওয়া উচিত ছিলো৷
উনার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত করা যেতো অন্ততপক্ষে! মেয়র জাহাঙ্গীর আলম পারিবারিক ভাবে ধনী ব্যক্তি৷ মেয়র পদ,দলীয় পদ নেই বলে জাহাঙ্গীর আলম এর খুব বেশি ক্ষতি হয়নি বরং ক্ষতি হয়েছে আওয়ামীলীগের। ক্ষতি হয়েছে দেশের রাজনীতির৷ আবারো একটি রাজনৈতিক অপচর্চা সফল হয়েছে!
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম কে আপনি কেনো পছন্দ করবেন???
১. প্রথমত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম অত্যন্ত এনার্জিটিক তরুণ শক্তিমান নেতা ছিলেন। তৃণমূল পর্যন্ত যার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিলো।
২. মেয়র জাহাঙ্গীর আলম যানজট নিরসনে ট্রাফিক এর উপর নির্ভর না হয়ে বরং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করে যানজট নিরসনে ভূমিকা রেখেছেন৷
৩. বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ কওমী ঘরানার আলেম ওলামা আওয়ামীলীগ কে সমর্থন করেনা৷ শুধুমাত্র ব্যতিক্রম গাজীপুর সিটি। কারণ মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রত্যেক মসজিদ এর ইমাম, মুয়াজ্জিন দের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। ফলে আলেম ওলামাদের মুখে ছিলো সরকার বন্দনা
৪. মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী ছিলেন। অর্থের প্রতি তার নগ্ন লোভ কোনোদিন ছিলোনা যার ফলে তার সময়কালে তার দ্বারা কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ যা এই মুহুর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরল ঘটনা।
৫. মেয়র জাহাঙ্গীর আলম অত্যন্ত সামাজিক মিষ্টভাষী, মিশুক লোক ছিলেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি সাধারণ জনতার সাথে তার সম্পর্ক মজবুত করেছিলো।
৬. মেয়র জাহাঙ্গীর আলম অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ঠান্ডা মেজাজ এর রাজনীতিবীদ ছিলেন যার ফলে তিনি সংঘাত এড়িয়ে বিরোধী দল কে প্রতিহত করেছেন।
৭. মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিজে সরকারী কাজ তদারকি করতেন সরেজমিনে গিয়ে যার কারণে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদাররা তার কাছে প্রশ্রয় পেতোনা৷
এমন হাজারটা ভালো কথা মেয়র জাহাঙ্গীর আলম কে নিয়ে বলা যাবে! জনগণের সম্পৃক্ততা আর পছন্দই যদি নেতা বিচারের মানদণ্ড হয় তবে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এর সাথে খুব অন্যায় হচ্ছে।
আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক নেতাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিড়ে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমদের মতো পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবীদরা ভোটের মাঠে জনসাধারণের কাছে উদাহরণ হতে পারে! তাই মেয়র জাহাঙ্গীর আলম কে তার স্বপদে ফিরিয়ে দেওয়া এই মুহূর্তে সরকারের রাজনৈতিক কৌশল হওয়া উচিত বলে মনে করি।
শিবলী মাহাদী, কলামিষ্ট,ডেইলী মিরর অব বাংলাদেশ