বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) সাংবাদিকতা এবং বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালে আইনটি চালু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে সাংবাদিক, লেখক এবং নাগরিক সমাজের কর্মীরা এর শিকার হচ্ছেন।
আইনটির কারণে শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতামত প্রকাশের জন্য গ্রেপ্তার হওয়া, এমনকি হয়রানির ঘটনাও ঘটছে। ২০২১ সালে, লেখক মোশতাক আহমেদের গ্রেপ্তার এবং কারাবাসে মৃত্যুর ঘটনাটি এই আইনের প্রভাব সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। তাকে শুধুমাত্র ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট করার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোরতার একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, এই আইনের মামলাগুলি সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের বিরোধিতার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বলে সমালোচকরা মনে করেন। উদাহরণস্বরূপ, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং লেখক সামাজিক মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করায় গ্রেপ্তার ও মামলা হয়। প্রখ্যাত ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত হন এবং প্রায় সাত মাস কারাবাসে ছিলেন, যা এই আইনটির অমানবিক দিকটি ফুটিয়ে তোলে।
এই আইনের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার অভিযোগ তুলেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংস্থাগুলো এই আইনের সংস্কার বা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে, যা বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হয়। যদিও সাম্প্রতিক সরকার আইনটির কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে, তবে এই পরিবর্তনগুলো বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে কতটুকু ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
বাংলাদেশে স্বাধীন মতপ্রকাশের এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের উচিত দ্রুত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার বা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া। স্বাধীন মতামত ও সাংবাদিকতার স্বার্থে আইনটির যথার্থ ব্যবহারের নিশ্চয়তা প্রদান একান্ত জরুরি।