জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম এবং রেজিস্ট্রার আবু হাসান এর পেনশন সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
এছাড়াও ছাত্রলীগের ২৮৯ জন নেতাকর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং হামলায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ৯ শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার ও ১০ শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা শেষে গতকাল সোমবার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাত তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সিন্ডিকেট সভাটি বেলা ১১ টায় শুরু হয়ে চলে প্রায় রাত পৌনে ১ টা পর্যন্ত।
উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলন চলাকালে জাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৮৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যাদের ছাত্রত্ব শেষ তাদের সনদ স্থগিত করা হবে। আর যারা পরীক্ষা ও ভাইভা দিয়েছে তাদের ফলাফল স্থগিত করা হবে এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে।’
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের সম্পর্কে তিনি জানান, ‘আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৯ জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আরও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
সাময়িক বরখাস্ত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির, সাবেক প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বশির আহমেদ, বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট ইসরাফিল আহমেদ রঙ্গন, শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট তাজউদ্দীন শিকদার, বাংলা বিভাগের নাজমুল হাসান তালুকদার, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া,ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক মেহেদী ইকবাল এবং ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হোসনে আরা বেবী।
এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে গণপিটুনি ও পরবর্তী সময়ে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় আটজনকে ৬ মাসের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দায়েরকৃত মামলার ধারায় পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ জুলাইয়ের রাতকে ‘কালো রাত’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নামে থাকা বিভিন্ন স্থাপনার নাম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা হল, শেখ রাসেল হল এবং শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোহাগ/মিরর