বিদ্রোহী,সাম্য ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্মান জানাল নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ, জামালপুর।
গত শনিবার (১ জুন) জামালপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু মিলনায়তনে সংগীত, আবৃত্তি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী শহীদ কবির পলাশ।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশ নেন জামালপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনোয়ার হুসেন মুরাদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম জাওয়াদুল হক। অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক শিবলুল বারী রাজু। স্বাগত বক্তব্য দিয়ে আলোচনার সূচনা করেন নবনির্বাচিত জামালপুর নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হাবিবুল ইসলাম শান্ত।
সভাপতিত্ব করেন নবগঠিত কমিটির সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নজরুল গবেষক প্রফেসর ড. মুজাহিদ বিল্লাহ ফারুকী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংগঠনের সদ্যপ্রয়াত সভাপতি, সাংস্কৃতিক সংগঠক হাসনাত তালুকদারের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
বিশেষ এ আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নজরুলসংগীত শিল্পী সুজিত মোস্তফা এবং নির্বাহী সভাপতি, কিংবদন্তি শিল্পী ফেরদৌস আরা। তাঁদের বক্তব্যে অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যোগ হয় এবং উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় এক অনুপ্রেরণামূলক আবেগ। আলোচনা শেষে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদ কবির পলাশ নবগঠিত কমিটির হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষেকপত্র ও ফুল তুলে দেন।
গঠিত নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রফেসর ড. মুজাহিদ বিল্লাহ ফারুকী এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন নজরুল সংগীতশিল্পী খন্দকার হাবিবুল ইসলাম শান্ত। ২৫ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠকরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় সুরের জাদুতে ভরপুর এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন শিউলী চৌধুরী, সৈয়দুজ্জামান শান্ত, আফরিন জান্নাত আঁখি, হোমায়রা তাবাসসুম অহনা, সুনন্দা কর্মকার, আনোয়ারা খাতুন আঁখি, সিফা এবং হাবিবুল ইসলাম শান্ত।
একক ও কোরাস মিলিয়ে পরিবেশিত হয় মোট ৮টি গান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী আমিন ইভা ও আহমদ কাদরী লিটন, যাঁদের কণ্ঠে কবিতার পঙ্ক্তিমালা ছুঁয়ে যায় দর্শকের হৃদয়। সবশেষে মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ শহীদ কবির পলাশ।
উপস্থিত দর্শকের অনুরোধে তিনি নজরুলের বিভিন্ন রাগনির্ভর, দেশাত্মবোধক ও প্রেমঘন সংগীত পরিবেশন করেন। তাঁর মোহনীয় কণ্ঠ, নিখুঁত উপস্থাপনা ও হৃদয়ছোঁয়া সুরে বিমুগ্ধ হয়ে পড়ে মিলনায়তনভর্তি শ্রোতা। এ সময় করতালির ঝংকারে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন সঞ্জীব সেন (হারমোনিয়াম), এম আর মুন্না (তবলা), তন্ময় তনু (গিটার), তালাত মাহমুদ ও দীপ (প্যাড)। পুরো অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন দুই অভিজ্ঞ উপস্থাপক মানসী গোস্বামী ও সাগর মুখার্জী।
নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন প্রজন্ম যদি শুদ্ধ নজরুল সংগীতে আগ্রহী হয়, তাহলেই এমন আয়োজনের সার্থকতা মিলবে। তাঁরা জানান, নজরুলের চেতনা ও শিল্পধারা আগামী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাঁদের এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।