জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে ‘সি’ ক্যাটাগরিভুক্ত আহতরা সরকারি অর্থ সহায়তার চেক নিতে এসে জামালপুর জেলা প্রশাসনের অবহেলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ১১টায় চেক বিতরণের নির্ধারিত সময় থাকলেও দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে অপেক্ষা করেও কেউ তাদের খবর না নেওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে তারা পরে কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
আহতদের অভিযোগ, পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ১১টায় তারা সভাকক্ষে উপস্থিত হন। অনেকে এসেছেন জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে, কেউ কেউ রাজধানী ঢাকা থেকেও এসেছেন। কিন্তু বেলা বাড়লেও জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী উপস্থিত হননি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর অবশেষে জানা যায়, জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, আর বাকি কর্মকর্তারা রয়েছেন প্রশিক্ষণে।
আহতদের অনেকেই অভিযোগ করেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বয়সের ভারে দুর্বল, কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ। দীর্ঘক্ষণ অনাহারে-অর্ধাহারে বসে থেকে শারীরিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁরা। এমনকি প্রায় তিন ঘণ্টা পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত হয়ে খোঁজ নেননি বা দুঃখ প্রকাশ করেননি। এতে চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা এবং সভাকক্ষ ছেড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের চত্বরে বসে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এ সময় তারা “আবু সাঈদ, মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ”, “হুঁশিয়ার, সাবধান” ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার আহত দুলাল হোসেন বলেন, “আমাদেরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল ১৫ তারিখ সকাল ১১টায় চেক দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী আমি ঢাকার কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি। সকাল ১১টায় সভাকক্ষে প্রবেশ করি। দুপুর ২টা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করি। একজন কর্মচারী পর্যন্ত খোঁজ নেয়নি আমাদের। এটা আমাদের সঙ্গে অবহেলা নয় তো কী?”
বিক্ষোভের প্রায় আধা ঘণ্টা পর, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম কার্যালয়ে ফিরে আসেন এবং আন্দোলনে আহত ৩৭ জন সদস্যদের হাতে ১ লাখ টাকার চেক তুলে দেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, “আমি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলাম। অন্য কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণে থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। আমি অনুষ্ঠান শেষ করে দ্রুত ফিরে এসেছি এবং চেক বিতরণ করেছি। এ ঘটনায় আমাদের দিক থেকে যে ঘাটতি হয়েছে, কর্মচারীরা আহতদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।”
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া আহতদের সহায়তা দিতে সরকার সারা দেশের মতো জামালপুরেও ১ লাখ টাকা করে ৩৭ জনের মাঝে চেক বিতরণ করেছে।