জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি ছাত্র হলে এক ছাত্রীর প্রবেশ নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি ঘিরে ফের আলোচনায় এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের একটি কক্ষে চারজন ছাত্র ও একজন ছাত্রী অবস্থান করছেন। ছবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর তা প্রশাসনের নজরে আসে এবং বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে হল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ছাত্র হলে ছাত্রীদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে যাদের দেখা গেছে, তারা সবাই বাংলা বিভাগের ৫২তম ব্যাচের (২০২২-২৩ সেশন) শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন—ইশরাত জাহান, এফ এম প্রত্যয়, আমিনুল ইসলাম, সামিদুল ইসলাম ও মো. রাশেদ।
ছবির বিষয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবরের। আমাদের বিভাগের দুইটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই ইশরাতকে গালাগাল করা হয়। পরবর্তীতে ক্ষোভ থেকে এই ছবি প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ছবিতে থাকা ইশরাত জাহানও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, “ছবিটি সম্ভবত সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের। তখন কাজী নজরুল ইসলাম হলটি আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়নি। প্রহরী ছিল না। তখন অনেকেই হলে প্রবেশ করে ছবি তুলেছিল। আমিও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঢুকেছিলাম এবং অল্প সময় থাকতেই চলে এসেছি। এখন হঠাৎ করে সেই পুরনো ছবি প্রকাশ করে আমাকে একপাক্ষিকভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। এটা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।”
তিনি আরও বলেন, “হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি—এটা আমার ভুল ছিল। নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে। তবে তখন পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন, এবং হলে নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না।”
ছবিতে থাকা আরেক শিক্ষার্থী সাদিমুল ইসলাম জানান, “এই ছবি হল উদ্বোধনের দিন তোলা। আমরা নিজেরাই তখন অবাক হয়েছিলাম ছাত্রী দেখে। তবে ভেবেছিলাম, যেহেতু উদ্বোধনের দিন, তাই হয়তো প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটি মূলত হল প্রশাসনের গাফিলতির ফল।”
ছবিতে থাকা রাশেদ মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। আরেক শিক্ষার্থী, এফ এম প্রত্যয়ের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মামুন হোসেন বলেন, “ঘটনাটি সম্পর্কে আমরা অবগত। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে অনলাইনে তদন্ত নথিপত্র পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশেদুল আলম বলেন, “হলের অভ্যন্তরীণ বিষয় হওয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসন মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। তবে কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার বাইরে গিয়ে কিছু করে, তাহলে অবশ্যই তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, ছাত্র হলে ছাত্রী কিংবা ছাত্রী হলে ছাত্রের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমন ঘটনা হলে তা নীতিমালা লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে এবং তার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।