জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালইয়ে (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী পহেলা ফেব্রুয়ারী তফসিল ঘোষণা করার দিনে জাকসু’র পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল পালন করে জাবি ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে ছাত্রদলের মিছিলটি শুরু হয়ে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
এ সময়ে ‘জাকসুর সংস্কার, করতে হবে করতে হবে’, ‘ছাত্রদলের দাব, মানতে হবে মানতে হবে’, ‘ছাত্রলীগের আস্তান, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেয় নেতাকর্মীরা।
পরে জাবি ছাত্রদলের আহ্ববায়ক কমিটির প্রধান আহ্ববায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ডেইলি মিরর অফ বাংলাদেশকে জানান, ‘আমরা এর আগে বিভিন্নভাবে বলার চেষ্টা করেছি আমরা কেউ জাকসুর বিপক্ষে নই। তবে আমরা চাই এই জাকসু করতে গিয়ে যেন এখানে কোনো ছাত্রলীগের দোষর, ফ্যাসিবাদকে আশ্রয়দাতা ঢুকে না পড়ে। জাকসু নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন। তাই আমরা চাই জাকসুর ব্যাসিক কিছু সংস্কার এনে এরপর নির্বাচন দিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলাম এবং উপাচার্য স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন উপযুক্ত দাবি-দাওয়া মেনে তবেই জাকসুর নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আজ কেনো এতো তড়িঘড়ি করে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করতে এসেছে তা আমরা জানি না। আমাদের যোক্তিক দাবিগুলো মেনে তবে জাকসু হওয়ার পক্ষে আমরা।’
তাদের দাবিগুলো কি কি তা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ‘আমাদের প্রধান দাবি হলো জাকসুর সংস্কারের জন্য একটি সংস্কার কমিটি গঠণ করতে হবে। এছাড়াও ইতোমধ্যে জাকসুর প্রকাশ করা ভোটার তালিকায় অনেক গড়মিল রয়েছে তাঁর সংস্কার করে নতুন ভোটার তালিকা করতে হবে। ভোটার তালিকাসহ কোনো ছাত্রলীগ, ফ্যাসিবাদের দোষর যেন এখানে ঢুকতে না পারে এগুলো প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।’
এদিকে ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আফফান বলেন, ‘ভিসি স্যার একটা কথা সবসময়ই বলেন জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করো। আমি স্যারকে বলে দিতে চাই, জুলাই বিপ্লবকে আমরাও ধারণ করি। তবে ভিসি স্যারকে আমি স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আপনি জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করলে আপনার পাশের চেয়ারে এখনো কেনো আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এর দালাল বসে আছেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা কখনোই সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে কিংবা জাকসুর বিপক্ষে না। আমরা শুধু এই জাকসুর সংস্কার চাই। আগে সংস্কার, পরে জাকসু নির্বাচন। কাজেই কোনো তৃতীয় পক্ষের উষ্কানিমূলক বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীকে মুখোমুখি করার যে পায়তারা চলছে, তা সফল হবে না।’
জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের ভূমিকা নিয়ে তিনি ডেইলি মিরর অফ বাংলাদেশকে জানান, ‘ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে আমরা কোনো মন্তব্য কিংবা বাধা দিতে চাই না। তবে আমরা মনে করি তাদের গুপ্ত রাজনীতি ছেড়ে রাজনীতির খোলা ময়দানে আসা উচিৎ। পাশাপাশি আমরা তাদের এখনো কোনো রাজনৈতিক শক্তি বলে মনে করি না। কারণ তারা এখনো খাতা-কলমে নিষিদ্ধ রয়েছেন। তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে কবির হত্যার দায় স্বীকার করে নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাদের গুপ্ত রাজনীতি ছেড়ে খোলা ময়দানে রাজনীতি করা।’
বিকালের অবস্থান কর্মসূচী সমপর্কে ছাত্রদলের সদস্য সচিব অনিক বলেন, জাকসু নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে যারা বসে আছেন তারা আওয়ামী লীগের দোসর। তাদের বসিয়ে রেখে কোনভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাছাড়া জাকসুর যে গঠনতন্ত্র রয়েছে সেটা অনেক আগের। এই গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে এবং এই কাজগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে অন্যথায় তা মেনে নেওয়া হবে না। আজকে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এদিকে, জাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা হওয়ার পর ‘সংস্কারে’র প্রস্তাব তুলে ছাত্রদল জাকসু বানচালের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাকসুর তফসিল ঘোষণার দাবিতে ‘জাকসুর পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ নামে একটি সর্বদলীয় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন তারা।
সন্ধ্যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচীতে গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘অছাত্ররা কীভাবে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়, তারা কীভাবে কাউন্সিল কক্ষে বসে মিটিং করে। প্রশাসনকে বল্যে চাই, নূরুল আলম প্রশাসন যে ভুল করেছে আপনারা সে ভুল করবেন না। আজকে যদি প্রশাসন তফসিল ঘোষণা করে, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে৷ আমরা তফসিল না নিয়ে এখান থেকে যাব না।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ওনারা বলে জাকসু হলে নাকি লাশ পড়বে। তার মানে উনি সিদ্ধান্ত দিয়েছে তারা অশান্তি অরাজকতা সৃষ্টি করবে। তারা কাদের ছত্রছায়ায় এরা ক্যাম্পাসে আসে। তারা হলে এসে মিটিং করে, দু’দিন পর আমাকে হল থেকে বের করে দিবে না- তার কি গ্যারান্টি আছে। জাকসু না হলে আবার সে নতুন স্বৈরাচার গড়ে উঠবে। আপনারা যে নামেই রাজনীতি করেন না কেন, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি শুরু করতে চাইলে আবার মুগ্ধ, সাঈদ জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।’
অপর এক শিক্ষার্থী অন্বেষা বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি আবারও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে এটি অপ্রত্যাশিত। আমাদের প্রাণের দাবী জাকসু নিয়ে কিছু মানুষ টালবাহানা করছে। আমরা বলতে চাই, পূর্বঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা না হলে আমরা এখানেই অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরন অনশনে বসব।’
নাজমুল ইসলাম লিমন বলেন, ‘আমরা মনে করি এই সরকারের সময় যদি জাকসু নির্বাচন না করা যায় তাহলে এটি আর কখনোই সম্ভব নয়। কারন আমরা গত ৩৩ বছরে কোন দলীয় সরকারকে ছাত্রসংসদ দিতে দেখিনি। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কারো দাসত্ব করতে আসিনাই। আমরা আর একজন আবরার ফাহাদ দেখতে চাইনা।’
সোহাগ/ মিরর