কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নৈশ বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা বাসটি কয়েক ঘণ্টা তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ভেতরে যাত্রীদের মারধর ও লুটপাট চালায়। এ সময় এক নারী যাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পরে বাসটিকে রাস্তার পাশে কাত করে ফেলে পালিয়ে যান তারা।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর ডাকাত দল বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এ ঘটনায় বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
ধর্ষণের শিকার নারীকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
যাত্রীদের বরাতে মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন জানান, ২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে ঈগল পরিবহনের বাসটি মঙ্গলবার রাতে ঢাকার দিকে রওনা দেয়।
বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বিরতি দেয়। রাত দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহনকারী ১০ থেকে ১২ জন তরুণ যাত্রী বাসে ওঠেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা তরুণেরা অস্ত্রের মুখে একে একে যাত্রীদের সবাইকে বেঁধে ফেলেন।
ওসি আরো জানান, ডাকাতেরা সব যাত্রীর কাছ থেকে মুঠোফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুটে নেন। এরপর এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেন।
বাসটি বিভিন্নস্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখেন তারা। পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল–ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের কাছে রাস্তার পাশে বালুর ঢিবিতে বাসটি কাত করে রেখে ডাকাত দলের সদস্যরা চলে যান।
নাটোরের বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন জানান, তিনি বাসের নিয়মিত যাত্রী। বাসের সুপার ভাইজার রাব্বি ও হেলপার দুলাল তার পূর্বপরিচিত। কিন্তু বাসের এবারের চালক নতুন। তিনি বড়াইগ্রামের তরমুজ চত্বর থেকে আমড়া, কাঁঠাল ও তালসহ বিভিন্ন ফল ঢাকার গুলশানে নিয়ে যেতে বাসে ওঠেন। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য যাত্রা বিরতি দেয়।
পরে দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহনকরা ১০-১২ জন তরুণ যাত্রী উঠেন। তখন সবাই প্রায় ঘুমে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই তরুণ দল অস্ত্রের মুখে একে একে ঘুমন্ত যাত্রীদের সবাইকে বেঁধে ফেলে। প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে চালককেও জিম্মি করে বাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, গহনা নেয় ডাকাতরা। তারপর এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে তারা। পরে বাস বিভিন্ন রাস্তা ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। শেষে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির ডিবিতে ঠেঁকিয়ে ডাকাত দল নেমে যায়। পরে সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের উদ্ধার করেছে।
জানতে চাইলে ঈগল পরিবহনের মালিক পাবনার সোলায়মান হক আজ বুধবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর থেকে ২৫ থেকে ৩০ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয়। রাত সাড়ে ১১টায় বাসের সুপারভাইজার রাব্বী তাকে জানান, বাসটি সিরাজগঞ্জ পার হচ্ছে। এরপর রাত ৩টা ৯ মিনিটে অপরিচিত একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে রাব্বী জানান, বাসটি ডাকাতের কবলে পড়েছে। কয়েকটি জায়গা থেকে যাত্রীর ছদ্মবেশে ডাকাতেরা বাসে উঠেছিলেন।
মিরর/এ আর