গত ২৮ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কনসার্টে মার্কেটিং বিভাগ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় একপক্ষ দুষছেন অন্যপক্ষকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে অভিযোগ করা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের চারজন সদস্য তাদের উপর হামলা করে।
ওই দিনের ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে সাদির মিয়া বলেন, “কনসার্ট চলাকালে সাংবাদিকতা বিভাগের কয়েেকজন শিক্ষার্থী মুক্তমঞ্চ থেকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছিল। আশেপাশে অনেক সিনিয়র আপুসহ অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী ছিল। তাদের কে যখন বলি, ‘ভাই এসব বাজে ভাষা না বললে হয় না?’, তখন তারা আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। এটা নিয়ে তাদের সাথে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আমার হলের কয়েকজন বড় ভাই এসে আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়।”
অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম জিসান (১৬তম) বলেন, “আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম। এ সময় কথার মাঝে মাওলা একটি অশোভন শব্দ ব্যবহার করে। তখন মার্কেটিং বিভাগের সাদির ভাই বিষয়টি লক্ষ্য করে আমাদের এমন ভাষা ব্যবহারে নিষেধ করেন। আমরা তখন বলি যে, ‘নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম এবং আর এমনটা হবে না।’ তবুও তিনি আমাদের ওপর কিছুটা রাগান্বিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি শান্ত করতে রিফাত ভাই এগিয়ে আসেন। এরপর আমাকে কেউ একজন মুক্তমঞ্চের উপরের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি, নিচে ঝামেলা তৈরি হয়েছে।”
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম জিসান, গোলাম মাওলাসহ আরও কয়েকজন কনসার্ট চলাকালীন মুক্তমঞ্চের উপর থেকে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করছিলেন। এ সময় মার্কেটিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদির মিয়া তাদের এমন আচরণের প্রতিবাদ করে ভাষা সংযত রাখার অনুরোধ জানান। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আয়োজক কমিটির সদস্যরা সাদিরকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেন।
সেই সময় মার্কেটিং বিভাগের সাদেক সরকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে তর্কে জড়ান। ফলে আবারও দুই বিভাগের মধ্যে বাগবিতন্ডা শুরু হয়। এসময় সাংবদিকতা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী সাদেককে ঘুষি ও লাথি মারতে মারতে মুক্তমঞ্চের উপর থেকে নিচে নামিয়ে আনে। প্রতিবেদকের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এই সময় হামলায় অংশ নেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধি সৌরভ সিদ্দিকী (১৪তম), দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি আতিকুর রহমান তনয় (১৫তম), দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ (১৬) এবং ঢাকা প্রকাশের প্রতিবেদক আল শাহরিয়ার অন্ত (১৭তম)।
গতকাল (৩১ মে) এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রক্টর বরাবর এই চার জন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে স্মারকলিপি জমা দেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
হামলায় অভিযুক্ত চারজনের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে সৌরভ, অন্তু এবং প্রসেনজিৎ জানান সাংবাদিকতা বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হাসান রিফাতকে ধাক্কা মারায় তারা সংঘর্ষে জড়ান।
আতিকুর রহমান তনয় বলেন, “দর্শক সারিতে রিফাত ভাই ও কয়েকজন জুনিয়রের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি চলছিলো। সামাধানের উদ্দেশ্যে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে সাদেক আমাকে বলে, ‘সাংবাদিকতার হ্যাডম দেখাতে এসেছিস?’ আমি এমন প্রশ্নের কারণ জানতে চাইলে সে হঠাৎ আমাকে ধাক্কা দেয়। আমি পড়ে যাই, চশমাও মাটিতে পড়ে যায়।”
তবে এই বিষয়টি অস্বীকার করে সাদেক সরকার বলেন,”আমি ঝামেলা হচ্ছে দেখে সেখানে যাই এবং আমার পরিচিতদের বলি, এখন কোনো ঝামেলা না করতে। প্রোগ্রামটা যাতে সুষ্ঠু ভাবে শেষ হয়। তাদের কে হয়তো কেউ পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে। তারা ভাবছে এটা আমি দিয়েছি এবং কয়েকজন আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর শুরু করে এবং মারতে মারতে মুক্তমঞ্চ থেকে নিচে নিয়ে যায়।”
এই ঘটনার জেরে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাদেক সরকারকে সাথে নিয়ে সাখাওয়াত অরণ্য, তাজওয়ার তাজ, তাওহিদ রহমান সাকিব, মোহাম্মদ সাজিদসহ ওই বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আবারও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাগবিতন্ডায় জড়ান।
এসময় সাখাওয়াত অরণ্যকে বেল্ট খুলে সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারতে দেখা যায়। তখন অরণ্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক কালবেলা পত্রিকার প্রতিনিধি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক আবু শামা প্রশ্ন করতে গেলে তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ। এই বিষয়ে তার নিকট প্রশ্ন করলে তিনি আবু শামাকে ধাক্কা দেন। এবং তার কর্মীরা “আগে সাংবাদিক মার” বলে পেশাগত দায়িত্বপালন করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন। এঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মীরা হলেন সাইফুল মালেক আকাশ (বাংলা-১৫), জহিরুল ইসলাম জয় (ইংরেজি -১৬), তাওহিদ রহমান সাকিব (মার্কেটিং-১৭) ও মার্কেটিং -১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী তাজওয়ার তাজসহ ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী। এসময় ভিডিও ফুটেজ নিতে গেলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি চৌধুরী মাছাবিহর ফোন কেঁড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেন ছাত্রদলকর্মী সাইফুল মালেক আকাশ।
পুরো ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “ইমেইলের মাধ্যমে আমি একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে এখন কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। খোলার পর আমরা সবগুলো বিষয় নিয়ে বসবো।”