কুষ্টিয়ার এ্যাড. মো: মুহাইমিনুর রহমান পলল বলেন, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। উক্তিটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণের প্রারম্ভিকেই বলব আমাদের সমাজের প্রচলিত কিশোর বা টিন এজারদের বয়স ধরা হয় ১৩ থেকে ১৯ অর্থাৎ ইংরেজিতে Thirteen to Nineteen. ২০১৩ সালের শিশু আইনে বলা হয়েছে ১৮ বছরের কম বয়সীরাই শিশু।
সাধারণত এই তেরো থেকে উনিশ বছরের শিশুদের বয়সকালকেই বয়সন্ধীকাল। এ সময়ের মধ্যেই একজন শিশু কিশোরে পরিণত হয়ে যুবক বয়সে পা দেয়। মানুষের জীবনের খুবই স্পর্শকাতর সময় এটি। যখন স্কুল কলেজে শিক্ষারত থাকে এ বয়সীরা। তাদের মানসিকভাবে বেড়ে উঠায় নির্ভর করে তার চারপাশের পরিবেশ, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক।
সামাজিক বৈষম্য প্রতিটি রাষ্ট্রে বিদ্যমান থাকলেও আমাদের দেশে এর প্রভাব প্রচুর। শখ, আহ্লাদ ও দাবি নিয়ে তারা অবুঝ থাকে চাওয়া পাওয়ার ক্ষেত্রে। পিতা মাতার সামর্থ্য সক্ষমতা বিবেচ্য নয় তাদের কাছে৷ একবিংশ শতাব্দীতে অন্তর্জালের মায়ায় সবার দরকার স্মার্ট ফোন, বাইক ও নিত্য নতুন গেডজেট আইটেম।
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় অপ্রাপ্তবয়স্কের মানসিক দিকগুলো বিবেচনা করা হয় অভিভাবকদের নির্ভরশীলতায়। কেউ সামর্থ্যবান হয়ে দাবী পূরণ করে আবার কেউ প্রত্যাখান করে অভাব অনটন ও পরিবার পরিচালনা সামলানোর কারণ বশত।
এ বয়সে তাদের বাড়ির মুরব্বীদের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে যেমন ছোটদের আদরে অবচেতন মনে হিংসার জন্মও নিতে শুরু করে। তাদের ভাবনা, বাবা কর্মক্ষেত্রে মা গৃহস্থলী কাজে। কে বুঝবে তাদের সুখ দু:খের কথা।
এ পর্যায়ের তাদের মনের কথা শোনার মানুষগুলো হয়ে ওঠে অতি আপনজন। শিশু কিশোরদের সুস্থ মানসিক গঠনে কেউই তাদের যত্ন করেনা৷ তাদের জীবন চলে শাসনের উপর৷ তাদের হৃদয়ের স্পন্দন কেউ অনুভব করেনা। ব্যাতিক্রমও আছে খুব স্বল্প সংখ্যক অভিভাবক সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ করে।
বয়সটি এমনই সেনসিটিভ যে তাদের মানসিক বিকাশে পরিচর্যা না করলে হতে পারে চরম ভুল। যার মাসুল দিতে আর অনুশোচনায় ভুগতে পার হয় জীবন। স্কুল কলেজ আর বাসায় তাদের কেউ আপন বলে তারা মনে করেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
বন্ধুরাই হয়ে ওঠে তাদের প্রিয়জন। নিজের মনের কথা বলে হাল্কা হতে পারা বন্ধুর ভালো মন্দ দিক গুলো তার অবচেতন মনে আকর্ষিত করে৷ একভাবেই ভালো মন্দের পার্থক্য যাচাই বাছাইয়ের পূর্বেই তারা নিজেদের আপনজন বেছে নেয়।
ধরুণ একটি সিগারেটে আসক্ত বন্ধু কিংবা প্রেমকরা বান্ধবীর সুখ আর তৃপ্তি তাকে কয়েকবার আকর্ষণ না করলেও লুকিয়ে লুকিয়ে এগুলোতে জড়ানোতে তারা খুবই আনন্দ ও আকর্ষণ অনুভব করে। গোপনের চেষ্টা করে অভিভাবকের কাছে।
কিন্তু যখন অভিভাবকেরা আবিষ্কার করে প্রতিনিয়ত বাড়ির পয়সা চুরির কারিগর, সিগারেটে আসক্ত থেকে তার সন্তান এখন মাদকাসক্ত কিংবা প্রেম করতে গিয়ে যখন তার মেয়ে প্রতিনিয়ত নগ্ন ছবি শেয়ারিং এর কারণে ব্ল্যাকমেলিং এর শিকার হয়ে আত্মহত্যা চেষ্টা চালায়।
তখন আর ফেরানোর পথ না দেখিয়ে আরম্ভ করে শারীরিক প্রহারের আচরণ। যেগুলো শিশু কিশোরদের মনে আরো বিরুপ প্রভাব ফেলে এবং তারা বেশি মাত্রায় অন্যায্য কাজে লিপ্ত হয়ে অযত্নের সাথে। যেগুলো আরও ভয়াবহ হয়।
আমাদের দেশে গুড প্যারেন্টিং কিংবা অভিভাবকদের দায়িত্ব সংক্রান্ত কোনো পড়াশোনা কিংবা আলোচনা নেই। উন্নত বিশ্বে এগুলো প্রচুর। ঐতিয্যগতভাবে সন্তান মানুষের ধরণটাই পেটানো, বকা, কটু কথা, গাল মন্দ টাইপের প্রচলিত রয়েছে।
যেগুলো দিয়ে শিশু কিশোরদের উপকারের বদলে ক্ষতির শতাংশই বেশি। আমি নিজে দেড় বছরের সন্তানের পিতা। আমার অভিজ্ঞতা একেবারেই নূন্যতম কিন্তু আমার যৌবনের প্রারম্ভিকেই কিশোর অপরাধ কিংবা তাদের অনুভূতি ভাবাতো।
আমরা অধিকাংশ মানুষই এসবের মধ্যে দিয়েই বড় হই, সফলতা পাই, হারিয়ে যায়, লুকিয়ে থাকি সামাজিক অবস্থানের বিবেচনায়। কিন্তু এগুলো আমাদের পারিবারিক সমস্যা, যা না শোধরালে সমাজ আক্রান্ত হয়, শুরু হয় কিশোর অপরাধের।
আমার অসমাপ্ত পিএইচডি গবেষণার বিষয় কিশোর অপরাধ হওয়ায় এই বিষয়ে আগ্রহ বেশি। নিয়মিত জ্ঞান অর্জনের প্রায়শই ব্যর্থ চেষ্টা করি৷ ভাবি শিশু কিশোরদের জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়ার। তার আগে যেটা দরকার সেটা ব্যাপক আলোচনা।
কিশোর অপরাধ: তেমনভাবে সংগায়িত করতে না পারলেও অনুমান করা যায় নৈতিক অনৈতিক, আইনি বেআইনি, নিয়ম শৃঙ্খলার বোধ না থাকায় কিংবা সব জেনে শুনেই শিশুকিশোররা যখন দেশে প্রচলিত কোনো আইন ভঙ্গ করে তখন তাকে কিশোর অপরাধ আখ্যায়িত করা হয়। ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি অনুযায়ী ৯ থেকে ১২ বছর বয়সীদের কৃতকর্ম অপরাধ বলে পরিণতিত নয়।
অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় ১৩ থেকে ১৮ অথবা আইনের সাথে সাংঘর্ষিক শিশুর বয়স ১৯, সে যদি আইন ভঙ্গ করে তাকে কিশোর অপরাধ বলে।
কিশোরের অপরাধের পরিণতি কিংবা শাস্তির বিধান কিংবা আইন সম্পর্কে অজ্ঞাত অধিকাংশে।
বর্তমান বাংলাদেশের পার্লামেন্টে আলোচনা হওয়া অন্যতম আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিশোর অপরাধ নির্মূল। খুন, ধর্ষণ, মাদক সেবন ও ব্যবসা, অনলাইন বুলিং, হ্যাকিং, ডিজিটাল জালিয়াতি, পরীক্ষায় জালিয়াতি বা নকল, ব্ল্যাকমেলিং, পর্নোগ্রাফিসহ নানা ধরণের অপরাধ তারা সাধারণভাবে করে থাকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে।
এর অন্যতম কারণ ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা। চলচ্চিত্র, অপরাধ বিষয়ক চিত্রনাট্য ব্যাপক আকারে প্রভাবিত করে শিশু কিশোরদের মনোস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো। এক কথায় চলচ্চিত্রের প্রারম্ভিকে নীতিকথা থাকলেও দেশের ৮০% শিশু কিশোরদের মনে প্রেম জাগে সিনেমার নায়ক নায়িকাদের রোমান্টিক সীন দেখে। অন্যদিকে ক্রাইম জনরার চলচ্চিত্র প্রভাবিত করে কিশোর গ্যাং সৃষ্টি ও পরিচালনার দিক দিয়ে।
ক্যামেরা ফোন হাতে নেওয়ায় দুনিয়াটাকেই হাতে পেয়ে যাচ্ছে এখনকার শিশুরা। গ্রামের এক কর্ণারে বসেই ভিনদেশী তরুণীকে বিয়ের জন্য দেশে ডাকা হচ্ছে। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে বৈশ্বিক জনপ্রিয় নেশাদ্রব্য আমদানি করে বিত্তবান ঘরণার শিশু কিশোরদের নেশা আকৃষ্ট করছে প্রতিনিয়ত।
ন’গ্ন ছবি বা রোমান্টিক দৃশ্য ধারণ কিংবা ক্ষোভে সুপার এডিট করে ব্ল্যাকমেলিং এর কারণে সুইসাইড প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিন্নি কিংবা ঐশীতে রুপান্তর হতে চুলে বেণী বাধা মেয়েটির আজ খুব বেশি সময় লাগছেনা। বাবার প্রিয় মেধাবী ছেলেটির ইয়াবা ছাড়া রাত জেগে পড়ায় হয়না এমন পরিস্থিতি দেশের গ্রাম থেকে শহরে।
সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হলেও ফেরানো যাচ্ছেনা শিশু কিশোরদের অপরাধ বিমুখ হতে। কারণ সিস্টেমে অপরাধ ও সাজার নিয়ম লেখা থাকলেও সংশোধনের বিষয়টা কাগজে কলমেই থেকে যাচ্ছে, বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।
উপরন্তু নিয়ন্ত্রণের চেয়ে অধিক মাত্রাই বেড়েই চলেছে কিশোর অপরাধ। মেয়েরাও জড়িত এখন কিশোর গ্যাং কার্যক্রমে। মাদক কেনাবেচা, বেশ্যাবৃত্তি, চোরাচালানে বেরিয়ে আসছে শিলাস্তি রহমানের মতো মেয়েদের। একদিনে তারা অপরাধী হয়নি। দিনে দিনে এর অবস্থান আজকে উপনীত।
কুষ্টিয়ায় কিশোর অপরাধ: কিশোর অপরাধ বা গ্যাং কালচারের জন্ম পশ্চিমা দেশে আরম্ভ হলেও অচিরেই তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। একই ধরণের জামা কাপড়, স্টাইল নিয়ে এক একটা কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠে। এবং অপরাধ করে পৈশাচিক আনন্দ উল্লাস আর বিকৃতি নাচগানই সর্বস্ব।
রাজনীতিরতে সামরিক শাসন বন্ধ হবার পর থেকেই ছাত্রদের দিয়ে পেশিশক্তির ব্যবহার আরম্ভ করেছিলো বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো। পূর্বে সন্ত্রাসী, ক্যাডার ভিত্তিক দলীয় নির্ভরশীলতা থাকলেও। বিগত ২০ বছরে দলের আর বহিরাগিত ভাড়াটে মাস্তানের দরকার হয়নি।
পদ পদবী দিয়ে অযোগ্যদের কাজে লাগানোর কৌশল খাটিয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। মোটামুটি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক কারণে আর রাস্তায় যেতে হয়নি, দাবি আদায় কিংবা সরকার বিদ্রোহে। তাই দলীয় কোন্দলে শুধু দলীয় ক্যাডার মাস্তানদেরই যুদ্ধ হয়েছে ক্ষমতা আর আধিপত্যের লড়াইয়ে।
এসব করতে আর মিছিলে ভাড়ায় লোক আনতে জন্ম হয়েছে কিশোর গ্যাংদের৷ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় তারাই আজ কিশোর অপরাধী। ভারতের দুর্লভ ক্যাশাপ হোক, আর হোক নয়ন বন্ড। সারা এশিয়ায় তাদের নাম ছড়িয়েছে কিশোর গ্যাং দিয়েই। অবশেষে শত্রুর হাতে কিংবা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে কলেজে যাবার বয়সে।
আমাদের জীবদ্দশায় ব্যাচ, বয়েজ গ্রুপ দেখলেও আজ থেকে মোটামুটি এক দশক আগে থেকে কিশোর গ্যাং এর পরিচয় ঘটে এই শহরে অফিশিয়ালি। নাম উচ্চারণ না করলেও প্রতিনিয়ত স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সবিস্তরে ছেপেছে গণমাধ্যম কর্মীরা কিশোর গ্যাং নির্মূলের আশায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে আর জননেতা মাহবুবউল আলম এমপি মহোদয় সংবাদ সম্মেলনে কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে শূন্য টলারেন্স বলার পরেও একদল কিশোর গ্যাং এর প্রতিবাদ মিছিল করেছে হরিপুর ব্রিজের নিচে, দু:খজনক।
এ ঘটনা কিংবা আরো শহরের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় বারংবার মামলা গ্রেপ্তার হলেও থেমে থাকেনি কিশোর অপরাধ। চলেছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিত্য নতুন অভিনব কায়দায়। কিন্তু এদের কথিত বড়ভাই কিংবা গডফাদাররা পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করেনি। মেসেজ দিয়েছে চিনিনা, সম্পৃক্ততা নেই।
অন্যদিক মেয়েরাও থেমে নেই, উচ্চবিত্ত ধরের ছেলেদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের গ্যাং তৈরী করে বিপুল অর্থ কামিয়েছে সিন্ডিকেট করে। মেয়েদের গ্যাং এর তথ্যও এসেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিতে ও গণমাধ্যম কর্মীদের কলমে।
সর্বশেষ দুটি ঈদে প্রতিবছরের ন্যায় কিশোর গ্যাং সাউন্ড লাইট নিয়ে ঈদের দিন গান বাজনা থেকে বিরত ছিলো এবং বর্ষাকালে ডিজে মিউজিকে অর্ধ নগ্ন নাচ ও উচ্চহারে শব্দদূষণের নৌকা ভ্রমণ থেকে বিরত থেকেছে শান্তিপূর্ণ ভাবে।
চাঞ্চল্যকর নয় টুকরো হত্যা মামলার পর প্রেপ্তার ও সামাজিক আতঙ্কে পুরোপুরি থেমে গেছে শহরে গ্যাং কালচার৷ গডফাদার, পৃষ্ঠপোষক, বড় ভাইরা এখন আর দায়িত্ব নিতে চাইনা, ফোন ধরেনা, জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় কিশোর।
ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের কমপ্লেইনও প্রচুর বেড়েছে জেলা পুলিশ লাইনের সাইবার সেল, কিংবা মডেল থানার অর্ভ্যত্থনা রুম কিংবা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতগুলোতে।
কাপড়বিহীন বা রোমান্টিক ছবি শেয়ার করে নিয়মিত ব্ল্যাকমেলিং এ টাকা বা শরীর খোয়ানোর মাত্রা সইতে না পেরে এসেছে ন্যায় বিচার চাইতে।
অনলাইন জুয়ায় শুধু জিলা স্কুলের জনপ্রিয় শিক্ষিকা সন্তান হিসেবে দত্তক নেওয়া ভাস্তের হাতে খুনের ঘটনায় নয়, শহরের অলি, গলিতে, মোড়ের চায়ের দোকানে চলছে রমরমা অনলাইন গেম বেটিং। সর্বস্ব খুঁয়িয়ে বাপ মায়ের সাথে গন্ডগোল করে টাকা নিয়ে বসছে প্রতিনিয়ত জুয়ার আসরে।
এগুলো অনেক অপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটা মাত্র। নিজেও একসময় কিশোর ছিলাম, নানা সমস্যায় ভুক্তভুগী হয়ে পার করেছি জীবন। আমারো দোষত্রুটি অনেক ছিলো, কিন্ত সেসব শুধরিয়ে স্রষ্টার কৃপায় আজ একজন আইনজীবী।
কিশোর অপরাধ থেকে উত্তোরণের উপায়: আমি বিশেষজ্ঞ নই তবে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়া ও জানার আগ্রহ থেকে কিছু সভা সেমিনার আলোচনা ও মাঠ কর্মকর্তাদের উদ্বৃতি বিশ্লেষণে মতামত দিতে ইচ্ছুক কিশোর অপরাধ প্রশমণে।
অপরাধ কখনো নির্মূল সম্ভব নয়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ বা প্রশমণ সম্ভব৷ বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক জ্ঞান প্রয়োগ করে শিশু কিশোরদের মনোস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন প্রচেষ্টা বা প্রভাবিত করার মাধ্যমে।
যেমন:
অভিভাবকের দায়িত্ব:
১। সন্তানের দিকে পরিপূর্ণ যত্ন ও খবর নেওয়া।
২। সন্তানের বন্ধুদের ও পরিবারের খবর নেওয়া।
৩। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ।
৪। অতিরিক্ত টাকা চাওয়ার পদ্বতি পর্যবেক্ষণ।
৫। বন্ধু নয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৬। আস্থার জায়গা তৈরী করা যেন মন খুলে বলে।
৭। যথা সম্ভব দিনের কয়েক ঘন্টা একসাথে কাটান।
৮। সন্তানের আনন্দ বা প্রফুল্লতায় গুরুত্ব দেওয়া।
৯। গায়ে হাত তোলা ব্যাতীত মৌখিক শাসন করা।
১০। পারিবারিক দায়িত্বে সন্তানকে নিয়োজিত করা।
শিক্ষকের দায়িত্ব: শিক্ষকদের সাথেই বয়সন্ধী কালে শিশু কিশোরদের ভাব আদান প্রদান হয়। সহজেই একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর প্রবণতা বুঝতে পারে। শুধুমাত্র উপার্জন নয়। একজন দায়িত্বশীল মানুষ গড়ে তোলার শিক্ষকের ভূমিকা পালন করা উচিত পাঠ্য বইয়ের বাইরে নৈতিকতা ও শিষ্ঠাচারের জ্ঞান প্রদান করে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব: কমিউনিটি বিট পুলিশিং কার্যক্রম হিসেবে পাড়া মহল্লা স্কুল বা খেলার মাঠে মাঝে মাঝে যাওয়া। তাদের ও চারপাশের সকলের খোজ নেওয়া। ঝুঁকি দেখলে অভিভাবকের সাথে আলাপ করা। মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় অভিভাবক ও প্রভাবিতকারী প্রতিনিধিদেরকে যুক্ত করে আলোচনা ও কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করা। কেউ অপরাধ করলে তার সাথে শিশু বা কিশোর সুলভ আচরণ করা। তাদেরকে সংশোনাগারে পাঠানোর আগে এবং দোষী প্রমাণিত হবার পূর্ব পর্যন্ত দুর্ব্যবহার না করা।
সুন্দর জীবন গড়ায় তাদের স্বপ্ন দেখানো।
আমার ও আমাদের দায়িত্ব: সেপ্টেম্বরে মাঠ পর্যায়ে স্কুলভিত্তিক প্রজেক্টের মাধ্যমে কিশোর অপরাধের বিপক্ষে সামাজিক আলোচনা শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করবে আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলো।
এ্যাড. মো: মুহাইমিনুর রহমান পলল, প্রাক্তন রিসার্চ স্কলার (২০২১-২০২৪) চন্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, মোহালী, পাঞ্জাব, ভারত।
এম্বাসেডর, গ্লোবাল পীস চেইন (২০২৪-২০২৬),সার্ক ব্রিলিয়ান্স এওয়ার্ড ও ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স এওয়ার্ড ২০২৪ প্রাপ্ত সমাজসেবক।,সদস্য, জেলা আইনজীবী সমিতি, কুষ্টিয়া,সমন্বয়ক, সম্মিলিত সামাজিক জোট,আহবায়ক, উৎসর্গ ফাউন্ডেশন, কুষ্টিয়া জেলা শাখা,প্রতিষ্ঠাতা, কালপুরুষ এবং কুষ্টিয়া ফিল্ম সোসাইটি