কবরের নামফলকে নেই নাম-পরিচয়। লেখা রয়েছে দাফনের সময় নিহতের গায়ে কী রঙের পোশাক গায়ে ছিল। এমনই এক কবর দেখা গেছে সিরিয়ার একটি কবরস্থানে।
জানা যায়, কবরটি একটি মেয়েশিশুর। সে সিরিয়ায় গত মাসের ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিল। তার কবরের নামফলকে কোনো নাম নেই। তাকে যাতে পরিবারের কেউ শনাক্ত করতে পারে সেই আশায় সেখানে লেখা রয়েছে, মেয়েটির গায়ে দাফনের সময় একটি সবুজ সোয়েটার ছিল। নামফলকে আরবি ভাষায় লেখা রয়েছে, ‘অজ্ঞাতপরিচয়, সবুজ সোয়েটার পরা ছোট্ট মেয়ে’।
৬ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর থেকে উত্তর সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহর জান্ডারিসের কবরস্থানে ৭০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক মায়সারা আল-হুসেন বলেছেন, অজ্ঞাতপরিচয় নিহতদের কবর দেওয়া লোকেরা কখনো কখনো তাদের মুখের ছবি তুলেছে। তবে এই শিশুটির ক্ষেত্রে বিকৃতি বা শনাক্ত করা যায়নি বলে তারা ছবি তুলতে পারেননি। তাই কবরের নামফলকে লেখা হয়েছে যে মেয়েটি একটি সবুজ সোয়েটার পরে ছিল।
সিরিয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্পের পর এখনো অনেকে নিখোঁজ। ফাদেল এল জাবের মোবাইলে তার ছেলে এবং নাতি-নাতনিদের ছবি দেখাচ্ছেন (বাঁয়ে)। ইন্তিসার শেখো মোবাইলে ১২ বছর বয়সী ভাগ্নে মোস্তফার ছবি দেখাচ্ছেন। ছবি : রয়টার্স/খলিল আশাউই
যারা হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনকে খুঁজছেন তাদের কাছে আল-হুসেন কবরে শুয়ে থাকা মানুষদের ছবিগুলো দেখান। তিনি এর মাঝে একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন এবং আত্মীয়দের কাছে কবরটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু প্রায়ই তিনি সাহায্য করতে পারেন না। ফলে তার কাছে আসা মানুষদের অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে অন্যান্য কবরস্থান দেখিয়ে দেন।
জান্দারিসে ভূমিকম্পে নিখোঁজ স্বজনকে খুঁজছেন এমন একজন ইন্তিসার শেখো। তিনি এখনো তার ১২ বছর বয়সী ভাগ্নে মোস্তফার খবরের জন্য অপেক্ষা করছেন। যে ভবনে তার মা এবং তার দুই ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছিল তার ধ্বংসস্তূপে মোস্তফাকে পাওয়া যায়নি। তার এক ভাই তার বাবার মতো বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে তিনি মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। তিনি এখন শেখোর বাড়িতে আছেন। শেখোও কবরস্থানে গিয়েছিলেন। কিন্তু মোস্তফার খোঁজ পাননি।
এ রকম আরো একজন ৬৫ বছর বয়সী ফাদেল এল জাবের। সালকিন শহরে তাদের অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ধসে পড়ার পর থেকে তিনি তার নিখোঁজ তিন নাতি-নাতনির সন্ধান করছেন। তাদের বাবা-মা ও দুই ভাই-বোনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জাবের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এখানে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। দুই বা তিনজন বেঁচে গেছে। সেই তিনজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।’
সূত্র : রয়টার্স