বিভিন্ন অভিযোগের মুখে অবশেষে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন। রোববার (৮ জুন) সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুরগামী একটি ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করেন তিনি।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বিভাগের ডিআইজি মোয়াজ্জেম হোসেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শেখ কবির দেশ ছেড়েছেন, তবে তার বিদেশযাত্রায় কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল কি না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
৮২ বছর বয়সী শেখ কবির হোসেন শারীরিকভাবে বেশ দুর্বল, স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও করতে পারেন না। তবুও গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রভাবের কারণেই তিনি এসব পদ ধরে রাখতে পেরেছিলেন।
বিশেষ করে, তিনি ছিলেন ২৩টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষ পদে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একাধিক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানি, সরকারি-বেসরকারি সেবাখাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠন।
২০১১ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। যদিও বিআইএর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই বছর অন্তর নির্বাচন হওয়ার কথা, তবে শেখ কবিরের অবস্থানের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে কোনো স্বাভাবিক নির্বাচন হয়নি।
শেখ কবির হোসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই। এই পারিবারিক পরিচয়ের কারণেই তিনি এক সময় গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এই পরিচয়কে পুঁজি করেই তিনি বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষপদে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছিলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি নিজেকে সরকারের অনানুষ্ঠানিক প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে আছে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থপাচার এবং অযোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বড় বড় পদ আঁকড়ে রাখার অভিযোগ।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরে যায় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকেই শেখ কবির হোসেন বিভিন্ন পদ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়েছে।
তবে দেশ ছাড়ার সময় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল কি না বা তিনি কোনো তদন্তের আওতায় ছিলেন কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়।