পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সরিষা চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা।
সোমবার (১৩জানুয়ারি) সরজমিনে দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মাঠ। আশানুরূপ ফলন ঘরে তুলতে শেষ সময়ে সরিষা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার সরিষা চাষিরা।
সরিষা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং রোগবালাইয়ের উপদ্রব কম হলে এক বিঘা জমিতে সাত থেকে আট মণ সরিষা উৎপাদিত হয়। বাজারভেদে প্রতিমণ কাঁচা সরিষা দুই হাজার থেকে শুরু করে দুই হাজার পাঁচশত টাকা এবং শুকনো সরিষা তিন হাজার থেকে শুরু করে তিন হাজার পাঁচশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। শ্রমিক খরচ তেমন নেই বললেই চলে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষার উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং গত কয়েক বছর বাজারে সরিষার ভালো দাম থাকায় বাড়ছে সরিষা চাষের পরিধি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ মৌসুমে দেবীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত দশ ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভায় মোট ৪ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এবছর সারাদেশের ন্যায় আলু চাষ বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় ৮৪৮ হেক্টর জমিতে কম সরিষার চাষ হয়েছে। তবে সরিষার উৎপাদন বাড়াতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চার হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির মাঝে প্রণোদনার অংশ হিসেবে বিনামূল্যে উন্নত জাতের সরিষার বীজ এবং সার বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের কালুপীড় ভাঙ্গার পাড় গ্ৰামের ধীরেন্দ্রনাথ রায় নামে এক চাষি বলেন, এবছর প্রথম বারের মতো এক বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার লাগিয়েছি। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ এবং সার দিয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রথমবারেই ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি সরিষার ভালো দাম পাবো।
সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের মল্লিকাদহ মাঝাপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর নামে আরেক চাষি বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষাতে লাভ বেশি, তাই গত কয়েক বছর ধরে সরিষার আবাদ করতেছি। গত বছর এক বিঘা জমিতে ছয় মণ সরিষা হয়। কাঁচা অবস্থায় ক্ষেত থেকে দুই হাজার দুইশত টাকা দরে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করি। সরকারি প্রণোদনার বীজ ও সার পাওয়ায় সর্বমোট আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। এবারও সরিষা লাগিয়েছি ভালো ফলন হয়েছে।
এদিকে রোগবালাই ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণের মাধ্যমে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নাঈম মোর্শেদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার ফলন বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড় দমনে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ চলমান রয়েছে। কৃষকরা লাভবান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।